জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির ভূমিকা
জাতীয়তাবাদ বিকাশে ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির ভূমিকা লেখো। |
ভূমিকা
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশে প্রধান উপাদান ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা। এই সূত্রে সাহিত্য, সংবাদপত্র এবং বিশেষ কিছু ঘটনা এদেশীয় মানুষদের এক জাতীয়তার সূত্রে বাঁধতে সাহায্য করে। এই সাহিত্য উপাদানের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি অন্যতম।
নীলকরদের শোষণ
নীলকর সাহেবরা বাংলার নীলচাষিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত। যেমন- ① অনিচ্ছাসত্ত্বেও চাষি তার জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য হত। ② নীলচাষের জন্য চাষিদের আগাম টাকা বা দাদন নিতে বাধ্য করা হত। এই দাদনের পরিমাণ ছিল বিষা প্রতি ২ টাকা মাত্র। ③ উৎপন্ন নীল কেনার সময় ওজনে বেশি নেওয়া ও দাম কম দেওয়া হত।
নীলকরদের অত্যাচার
চাষিরা নীলচাষে অনিচ্ছুক হলে নীলকর সাহেবরা বিভিন্নভাবে তাদের উপর অত্যাচার করত। যেমন- ① চাষির গোরু-ছাগল আটক করা, ② চাষিদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া বা আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ③ চাষির ছেলেমেয়েদের বন্দি করা ইত্যাদি। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতেও নীলকরদের প্রভাব ছিল। তাই নীলচাষিরা অসহায় হয়ে পড়েছিল।
নীলচাষিদের আন্দোলন
পঞ্চম রেগুলেশন, সপ্তম রেগুলেশন এবং বারাসত-এর ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাপলি ইডেন-এর ঘোষণায় নীলচাষ চাষিদের স্বেচ্ছাধীন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাষিরা নীলচাষ করতে অসম্মত হয়। তাদের আন্দোলন ছিল সংঘবদ্ধ এবং অহিংস।
শিক্ষিত শ্রেণির সমর্থন
নীলকরদের শোষণ, নীলচাষিদের দুর্দশা ও সংঘবদ্ধ আন্দোলন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হিন্দু প্যাট্রিয়ট, অমৃতবাজার পত্রিকা ইত্যাদি। নীলদর্পণ নাটক এই ঘটনাকে জীবন্ত করে উপস্থাপিত করে। এর ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি নীলচাষিদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়। তারা ঔপনিবেশিক শোষণের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারে।