‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়
‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়? |
বাংলা সমাজের প্রতিফলন
গ্রামবাংলার কৃষকদের দুর্দশা
‘নীলদর্পণ’ নাটকে বাংলার কৃষকদের দুর্দশার কথা ফুটে উঠেছে। এই সময় সাধারণ চাষিরা জমি চাষ করে সারা বছরের খাবার জোগাড় করতে পারত না।
তারা তাদের দুঃসময়ে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হত। বাংলায় নীলচাষ শুরু হলে তারা নীলকর সাহেবদের কাছ থেকেও দাদন বা অগ্রিম অর্থ নিতে বাধ্য হত।
নীলচাষিদের দুর্দশা
নীলকর সাহেবরা বাংলার নীলচাষিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত। যেমন- অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাষি তার জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য হত। ② নীলচাষের জন্য চাষিদের আগাম টাকা বা দাদন নিতে বাধ্য করা হত। এই দাদনের পরিমাণ ছিল বিঘা প্রতি ২ টাকা মাত্র। ③ উৎপন্ন নীল কেনার সময় ওজনে বেশি নেওয়া ও দাম কম দেওয়া হত।
চাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার
‘নীলদর্পণ’ নাটকে চাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচারের বিবরণ পাওয়া যায়। চাষিরা নীলকর সাহেবদের কথামতো নীলচাষ করতে না চাইলে তাদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার করা হত। চাষিদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, নীলকুঠিতে তাদের গোরুবাছুর এনে বেঁধে রাখা, জমির ফসল নষ্ট করে দেওয়া, নারীদের শ্লীলতাহানি ও চাষিদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হত। গ্রামের অবস্থাপন্ন চাষিরাও নীলকরদের এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেত না।
তৎকালীন গ্রামসমাজের জীবনযাত্রা ও ভাষা
‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে তৎকালীন বাংলার গ্রামসমাজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারা যায়। এই নাটকে আঞ্চলিক ভাষার সাবলীল প্রয়োগ হওয়ার ফলে তৎকালীন শহুরে ভাষা ও গ্রামের মানুষের কথ্যভাষা সম্পর্কেও জানা যায়। দীনবন্ধু মিত্র পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা আয়ত্ত করে এই নাটকের চরিত্রগুলিকে মুখের ভাষার ভিত্তিতে জীবন্ত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
গ্রামবাংলার চাষিদের প্রতিরোধ
নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচার নীলচাষিরা নীরবে সহ্য করেনি। তারা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করেছিল। নাটকে নীলচাষি তোরাপ-এর ভূমিকা ছিল প্রতিবাদী কৃষকের।