মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলতে কী বোঝো । মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি লেখো। |
মৃত্তিকা সংরক্ষণ
ক্ষয় ও অবনমনের হাত থেকে রক্ষা করে, মৃত্তিকা সম্পদকে মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করার জন্য যে-সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় বা পদ্ধতিসমূহ
বৃক্ষরোপণ: গাছের শিকড় মাটিকে দৃঢ়ভাবে ধরে রেখে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই, মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করার জন্য বৃক্ষরোপণের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : ভূমির উপর তৃণের আচ্ছাদন জলের পৃষ্ঠপ্রবাহের হাত থেকে মৃত্তিকাকে রক্ষা করে। তাই, পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করে তৃণভূমির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়।
শস্যাবর্তন : কৃষিজমি পতিত না রেখে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের ফসল শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে চাষ করলে একদিকে যেমন মুক্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে, তেমনি অপরদিকে সারাবছরই মাটি শস্য দ্বারা আবৃত থাকায় ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।
ধাপচাষ : পাহাড় বা পর্বতের ঢালে ধাপ কোটে চাষ করলে জলের গতি হ্রাস পায় ও মৃত্তিকাক্ষয় নিয়ন্ত্রিত হয়।
সমোন্নতিরেখা বরাবর চাষ : পার্বত্য অঞ্চলে সমোন্নতিরেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে চাষ করলে প্রবাহিত জলধারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস পায়। ফালিচাষ: সমোন্নতিরেখার সমান্তরালে চাষ না করে ঢালের আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে চাষ করলে মাটি সংরক্ষণ করা যায়।
স্থানান্তর কৃষি বা ঝুমচাষ রোধ : আদিবাসী কৃষকদের সচেতন করে স্থানান্তর কৃষি বা ঝুমচাষ বন্ধ করতে পারলে অরণ্য সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মাটিক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।
জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি: মৃত্তিকাতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে অধিক পরিমাণে জৈবসার ব্যবহার করলে মৃত্তিকার গঠন, গ্রথন, প্রবেশ্যতা প্রভৃতি ধর্মগুলি বজায় থাকে, ফলে মৃত্তিকা সংরক্ষণ সম্ভব হয়।
বাঁধ নির্মাণ: নদীপাড়ে বা সমুদ্র উপকূলে বাঁধ নির্মাণ করলে, অথবা কংক্রিট দিয়ে নদীপাড় ও উপকূল অংশ বাঁধালে মৃত্তিকাক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শেল্টার বেল্ট : শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের গতিপথে অসংখ্য গাছ সমান্তরালভাবে রোপণ করলে বায়ুপ্রবাহের গতি প্রতিরোধ করে মৃত্তিকাক্ষয়ের পরিমাণ হ্রাস করা যায়। মরু অঞ্চলে এভাবে মাটির ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
গালিচাষ: জলপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট খাতক্ষয় বা গালিক্ষয় রোধ করতে পারলে মাটি সংরক্ষণ সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে খাত বরাবর বা খাতের সর্বোচ্চ অঞ্চলে জলপ্রবাহ রোধের জন্য বাঁধ বা দেয়াল তৈরি করে বাঁধের পাশে পাশে চারাগাছ লাগালে মৃত্তিকাক্ষয় কম হয়। বিশেষত এই সমস্ত অঞ্চলে জোয়ার, বাজরা, সয়াবিন প্রভৃতি ভূমিক্ষয় রোধে সাহায্যকারী শস্য চাষ করলে মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করা সম্ভব। এরূপ চাষবাস গালিচাষ নামে পরিচিত।
মালচিং : শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলে মাটির উপর লতাপাতা, খড়কুটো, ঘাস, আগাছা প্রভৃতি বিছিয়ে রাখলে মাটির বাষ্পীভবনের হার হ্রাস পায় এবং আর্দ্রতা বজায় থাকে। ফলে, চাষাবাদের সুবিধা হয়। মৃত্তিকা সংরক্ষণের এই পদ্ধতিকে মালচিং বলে।
মালচিং : শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলে মাটির উপর লতাপাতা, খড়কুটো, ঘাস, আগাছা প্রভৃতি বিছিয়ে রাখলে মাটির বাষ্পীভবনের হার হ্রাস পায় এবং আর্দ্রতা বজায় থাকে। ফলে, চাষাবাদের সুবিধা হয়। মৃত্তিকা সংরক্ষণের এই পদ্ধতিকে মালচিং বলে।
অন্যান্য পদ্ধতি: এ ছাড়া অম্লধর্মী মৃত্তিকায় চুন মিশিয়ে অম্লতা নিয়ন্ত্রণ, জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্তিকার লবণতা হ্রাস প্রভৃতি ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্তিকা সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুন – নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা