প্রাক্-লুথার যুগে ধর্মসংস্কার সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার প্রসারে ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাসের ভূমিকা লেখো

প্রাক্-লুথার যুগে ধর্মসংস্কার সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার প্রসারে ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাসের ভূমিকা লেখো

ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (Desiderius Erasmus, ১৪৬৬/১৪৬৯-১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন মানবতাবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন প্রবক্তা। তিনি ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে চার্চ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিজ অভিমত প্রকাশ করেছিলেন।

প্রাক্-লুথার যুগে ধর্মসংস্কার সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার প্রসারে ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাসের ভূমিকা 

(1) চার্চ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি: মানবতাবাদী ইরাসমাস সেযুগের চার্চগুলির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও সেই শুদ্ধিকরণকে তিনি চার্চের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক চার্চ থেকে বেরিয়ে এসে কোনও পৃথক চার্চ তিনি গঠন করতে চাননি। ইরাসমাস একদিকে যেমন মুক্তিপত্র বিক্রয়, উপবাস, তীর্থযাত্রা, পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন ও সম্ভদের আরাধনা বা ধর্মদ্রোহীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের সমালোচনা করেছেন, তেমনই পোপের পার্থিব সম্পদের প্রতি তীব্র আসক্তির নিন্দা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

(2) গ্রন্থ প্রকাশ: ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ) ইরাসমাস In Praise of Folly গ্রন্থটি রচনা করেন। এই বইটিতে তিনি চার্চের দুর্নীতির প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের তীব্র আঘাত হেনেছিলেন।

(3) ধর্মের সংস্কারসাধন বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি: ইরাসমাস প্রাক্-লুথার পর্বে প্রথম ধর্মীয় তত্ত্বের সরলীকরণের উপর জোর দিয়ে ধর্মকে সাধারণ মানুষের মনের কাছাকাছি আনতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, একমাত্র শিক্ষার দ্বারাই প্রকৃত ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। শিক্ষাই পারে সামাজিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে। ইরাসমাস শিক্ষার বিস্তারে আন্তরিক ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

মূল্যায়ন

ইরাসমাসের চিন্তাভাবনা যদিও বৈপ্লবিক ছিল, তবুও তিনি কোনোরকম বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে স্বীকার করেননি। ধর্মভাবনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মধ্যপন্থী। এ কারণেই তিনি কখনোই চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। কিন্তু যাজক শ্রেণির বিচ্যুতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ ও আনুষ্ঠানিক ধর্মাচরণের সমালোচনা করে ইরাসমাস পরোক্ষভাবে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ভূমিকে আরও প্রস্তুত করেছিলেন, সেকথা বলাই যায়।

Read More – As You Like It MCQ

Leave a Comment