দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

সূচিপত্র

দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
দশম শ্রেণি জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

বিশ্রামরত একটি প্রাণী গমনে উদ্যত হল। এর চারটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করো।

বিশ্রামরত একটি প্রাণী গমনে উদ্যত হল। এর চারটি সম্ভাব্য কারণ হল- (i) খাদ্যান্বেষণ, (ii) আত্মরক্ষা, (iii) প্রজনন, (iv) অনুকূল পরিবেশের সন্ধান।

বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন ও আত্মরক্ষার কারণে প্রাণীরা গমন করতে বাধ্য হয়। দুটি উদাহরণের সাহায্যে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দাও।

বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন: বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করতে হয় যেমন- প্রজননের জন্য স্ত্রী ইলিশ মাছের সঙ্গে পুরুষ ইলিশ মাছও সমুদ্র থেকে নদীতে আসে। অর্থাৎ প্রজনন হল গমনের চালিকাশক্তি।

আত্মরক্ষা: বাঘের খাদক হল হরিণ। তাই বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হরিণ আত্মরক্ষা করে। অর্থাৎ আত্মরক্ষা হল গমনের চালিকাশক্তি।

নিম্নলিখিত অস্থিগুলোর মধ্যে অবস্থিত সন্ধিগুলোর নাম তালিকাবদ্ধ করো। হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা; স্ক্যাপুলা ও হিউমেরাস।

হিউমেরাস, রেডিয়াস, ও আলনার মধ্যে অবস্থিত সন্ধি হল কবজা বা কপাট সন্ধি। স্ক্যাপুলা ও হিউমেরাসের মধ্যে অবস্থিত সন্ধি হল বল ও সকেট সন্ধি।

মানুষের গমনে সাহায্যকারী চারটি পেশির নাম লেখো।

মানুষের গমনে সাহায্যকারী চারটি পেশি হল বাইসেপস্, ফিমোরিস, ট্রাইসেপস্ ব্রাকি, অ্যাডাকটর-লংগাস এবং গ্লুটিয়াস-ম্যাক্সিমাস পেশি।

নিম্নলিখিত অস্থিগুলোর মধ্যে অবস্থিত সন্ধিগুলোর নাম তালিকাবদ্ধ করো।

ফিমার ও টিবিয়া-ফিবিউলা; ফিমার ও শ্রোণিচক্র।
ফিমার ও টিবিয়া ফিবিউলা অস্থিসন্ধি হল কবজা সন্ধি ফিমার ও শ্রেণিচক্র অস্থিসন্ধি হল বল ও সকেট সন্ধি।

‘চলন ছাড়া গমন সম্ভব নয়’-ব্যাখ্যা করো।

কোনো নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনকে চলন বলে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে জীবদেহের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনকে গমন বলে। অর্থাৎ গমনের সময় জীবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয়। অর্থাৎ গমন হতে গেলে চলন হতেই হবে। তাই বলা যায় চলন ছাড়া গমন সম্ভব নয়।

মানুষের গমনে সাহায্যকারী চারটি অস্থির নাম লেখো।

মানুষের গমনে সাহায্যকারী চারটি অস্থি হল ফিমার, টিবিয়া- ফিবিউলা, টারসাল, মেটাটারসাল, ফ্যালানজেস, মেরুদণ্ড এবং পেলভিক গার্ডেল।

কবজা সন্ধির একটি বৈশিষ্ট্য এবং একটি উদাহরণ দাও।

এই অস্থির একটি প্রান্ত গোল ও উত্তল এবং অপর প্রান্ত অর্ধগোলাকার অবর্তল হয়। অস্থি গোলপ্রান্ত অপর অস্থি অর্ধগোলাকার অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সন্ধি সংলগ্ন অস্থিগুলি কেবলমাত্র একই দিকে অর্থাৎ সামনে বা পিছনে চালনা করা যায়। উদাহরণ: হাঁটু ও কনুই-এর অস্থি সন্ধি।

গমনের একটি প্রধান চালিকা শক্তি হল খাদকের শিকারে পরিণত হওয়া এড়িয়ে চলা। উপযুক্ত উদাহরণ দিয়ে বক্তব্যটি প্রতিষ্ঠা করো। 

খাদকের শিকারে পরিণত হওয়া এড়িয়ে চলার জন্য, প্রাণীটিকে নিজেকে রক্ষার জন্য সেই স্থান থেকে পলায়ন করতে হয়। অর্থাৎ প্রাণীদের আত্মরক্ষার জন্য গমন করতে হবে।

যেমন বনে মাংসাশী প্রাণী, বাঘ, সিংহ, হায়না প্রভৃতি পশুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য খাদক প্রাণী যেমন হরিণ, বরাহ প্রভৃতি প্রাণী আত্মরক্ষার জন্য স্থানান্তরে পলায়ন করতে বাধ্য হয়।

পায়রার উদ্বুদ্ধু পেশিগুলির নাম লেখো।

পায়রার উডুক্কু পেশিগুলি হল কোরাকোব্রাকিয়ালিস, পেক্টোরালিস, মেজর ও পেক্টোরালিস মাইনর।

‘বায়ুথলি’ কী?

রক্তজালক বিহীন, স্পঞ্জের ন্যায় স্থিতিস্থাপক থলি বিশেষ, যা পায়রার ফুসফুসের সাথে সংযুক্ত থেকে অতিরিক্ত অক্সিজেন সঞ্চয় করে। দ্বি-শ্বসনে সাহায্য করে, পায়রার শরীরকে উম্ন ও হাল্কা রাখে। এইরূপ ৭টি বায়ুথলি থাকে।

মাছের গমনে (সন্তরণে) জোড় পাখনার ভূমিকা লেখ।

গমনের সময় জোড় পাখনা (বক্ষ পাখনা) প্রসারিত হয়ে এক পাশে কাত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে মাছকে। দেহের অগ্রগতির সাথে বক্ষ পাখনা সংযুক্ত হয়ে জলের বাধা কমাতে সাহায্য করে ফলে মাছের গতি বৃদ্ধি পায়। আবার, বক্ষ পাখনা ও শ্রেণি পাখনা যুগ্মভাবে আন্দোলিত হয়ে মাছকে এক জায়গায় স্থির থাকতে সাহায্য করে।

মাছের গমনে বিজোড় পাখনার ভূমিকা লেখো।

মাছে অগ্রগতির সম পৃষ্ঠ-পাখনা কোনো একদিকে মাছের দেহের ঝুকে যাওয়া প্রতিহত করে। যে সব মাছেদের দেহে পৃষ্ঠ পাখনা লম্বা ও প্রসারিত হয়, তারা পৃষ্ঠ পাখনায় ঢেউ তুলিয়ে, আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে পারে। পুচ্ছ পাখনা জলের মধ্যে পার্শ্বঘাত প্রয়োগের মাধ্যমে দিক পরিবর্তনে ও সম্মুখ গমনে সাহায্য করে এবং এটি রাডার হিসেবে কাজ করে। পায়ু পাখনার গমনে বিশেষ কেনো ভূমিকা নেই।

মায়োটোম পেশি কী?

মাছেদের দেহে মেরুদন্ডের দুপাশে উপস্থিত ‘V’ আকৃতির পেশি খন্ড যা অ্যান্টাগোনিস্টিক উপায়ে সংকোচন ও শ্লথনের মাধ্যমে মেরুদণ্ডটি ‘S’ আকৃতি প্রাপ্ত হয় ফলে মাছের লেজ পর্যায়ক্রমে জলে ডান দিকে ও বাম দিকে আঘাত (পার্শ্বঘাত প্রয়োগ) করে এবং মাছের গমন সম্ভব হয়।

নিউম্যাটিক অস্থি (Pnewmatic bone) কী?

পায়রার দেহে উপস্থিত দীর্ঘস্থিগুলো বায়ুপূর্ণ হয়, ফলতঃ ওদের দেহ হাল্কা হয় ও উড়তে সুবিধা হয়। এটি একধরনের উড়ুক্কু অভিযোজনের (Volaus Adaptation) দৃষ্টান্ত।

কীল (Keel) অস্থি কী?

পায়রার দেহে উরঃফলকের (Sternum) সাথে লম্বভাবে যুক্ত একটি প্লেট যা উরঃফলকের আকৃতি নৌকার ন্যায় করে ফলতঃ উন্নত উদ্বুকু পেশিগুলি সংযুক্ত হওয়ার স্থান পায়। এইরূপ নৌকাকৃতি উরঃফলককে কীল বলা হয়।

অস্থি-সন্ধি কাকে বলে?

প্রতিটি মেরুদণ্ডী প্রাণীদেহে অস্থিগুলি (দুই বা ততোধিক) যে স্থানে লিগামেন্ট দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে তাকে অস্থি-সন্ধি বলে।

অস্থি-সন্ধি কতপ্রকার ও কী কী?

তিন প্রকার। যথা-অচল সন্ধি (Synarthrosis), স্বল্প সচল সন্ধি (Amphiarthrosis) ও সচল সন্ধি (Diasthrosis)।

তিনপ্রকার অস্থি-সন্ধির উদাহরণ দাও।

সচল সন্ধি (বল ও সকেট সন্ধি যা কোমরে উপস্থিত); অচল সন্ধি (করোটির স্যুচারে) ও স্বল্পসচল সন্ধি (মেরুদণ্ডের কশেরুকা মধ্যবর্তী অস্থি-সন্ধি)।

সাইনোভিয়াল তরল কি?

সাইনোভিয়াল তরল হল একপ্রকার পিচ্ছিল তরল (Lubricat- ing fluid) যা অস্থি-সন্ধির সাইনোভিয়াল প্রকোষ্ঠে উপস্থিত থেকে অস্থিগুলির সঞ্চালনে সাহায্য করে।

লিগামেন্ট কী?

লিগামেন্ট বা অস্থি-সন্ধী হল একপ্রকার নমনীয়, স্থিতিস্থাপক ইলাস্টিন প্রোটিন নির্মিত তত্ত্ব যা অস্থি-সন্ধিতে প্রধানত অস্থিগুলিকে ধরে রাখে।

অ্যাবডাকশন বলতে কী বোঝো?

যে প্রক্রিয়ার দ্বারা পেশি সংকোচনের সাহায্যে কোনো অঙ্গ দেহাক্ষ থেকে দূরে সরানো সম্ভব হয় তাকে অ্যাবডাকশন বলে এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত পেশিকে অ্যাবডাক্টর পেশি বলে। উদা: ডেল্টয়েড পেশি।

অ্যাডাকটর পেশি বলতে কী বোঝ?

যে পেশি সংকোচনের দ্বারা কোন অঙ্গ দেহাক্ষের নিকটবর্তী হয় তার্কে অ্যাডাকটর পেশি বলে এবং এই প্রক্রিয়াটিকে অ্যাডাকসন বলে। উদা: ল্যাটিমাস ডরসি।

পেশির সংকোচনশীল প্রোটিনের উদাহরণ দাও।

সংকোচনশীল প্রোটিনের উদাহরণ হল অ্যাকটিন ও মায়োসিন।

ফ্লেক্সন কী?

যে পেশি সংকোচন প্রক্রিয়ার দ্বারা দুটি অস্থি পরস্পরের কাছে আসে, তাকে ফ্লেক্সন বলে ও সংশ্লিষ্ট পেশিকে ফ্লেক্সর পেশি বলে। উদা: বাইসেপস পেশি।

কঙ্কালতন্ত্র কয়প্রকার ও কী কী?

তিনপ্রকার, যথা বহিঃকঙ্কাল (Exoskeleton), অন্তঃকঙ্কাল Endoskeleton) ও স্ল্যাংকনিক কঙ্কাল (Splanchnic skeleton)।

পায়রার বহিঃকঙ্কাল কী কী অংশ নিয়ে গঠিত?

পায়রার বহিঃকঙ্কাল নখর, আঁশ, পালক, চঞ্জু প্রভৃতি অংশ নিয়ে গঠিত।

প্রধানত কী কারণে মানব শিশু একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দ্বিপদ গমনে সক্ষম হয় না?

মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা অর্জন ও মালাইচাকি (Patella) সৃষ্টি প্রধানত; এই দুটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করার পরই মানুব শিশু দ্বি-পদ গমনে সক্ষম হয়।

কোরি চক্র কী?

অত্যাধিক কায়িক পরিশ্রম করলে (অভ্যাসবশত) পেশিতে গ্লাইকোজেনের আবাত জারন ঘটে ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরী হয় ও পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ল্যাকটিক অ্যাসিড যকৃতে সংগঠিত যে চক্রের মাধ্যমে পুনঃরায় গ্লাইকোজেনে পরিণত হয় তাকে কোরি চক্র বলে।

Leave a Comment