সন্ত্রাসের রাজত্বের ফলাফল গুলি লেখো

সন্ত্রাসের রাজত্বের ফলাফল

সন্ত্রাসের রাজত্বের ফলাফল গুলি লেখো
সন্ত্রাসের রাজত্বের ফলাফল গুলি লেখো

ভূমিকা

ফ্রান্সে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত জেকোবিনরা (Jacobin) যে ধরনের শাসনকাঠামো গড়ে তুলেছিল, তা ফ্রান্স তথা বিশ্ব ইতিহাসে ‘সন্ত্রাসের শাসন’ (Reign of Terror) নামে খ্যাত। ফ্রান্সের ইতিহাসে এই শাসনের বেশ কিছু সুফল ও কুফল দেখা গিয়েছিল।

সন্ত্রাসের শাসনের সুফল

ফ্রান্সের ইতিহাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল একটি ‘আপৎকালীন স্বৈরতন্ত্র’ (Dictatorship in Distress)। সন্ত্রাসের শাসনের সুফলগুলি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে লক্ষণীয়-

ফ্রান্সের নিরাপত্তা

বৈদেশিক আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ফ্রান্সে যে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল সন্ত্রাসের শাসন প্রাথমিকভাবে সেই অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে ফরাসি জনগণকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছিল।

সুগঠিত সেনাবাহিনী

বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য সন্ত্রাসের সংগঠকেরা একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেছিল। এর ফলে ফ্রান্সের সৈনাসংখ্যা অল্প সময়ের মধ্যেই ১০ লক্ষ অতিক্রম করে। সন্ত্রাসের কঠোর শাসন এই সেনাবাহিনীর মধ্যে গভীর জাতীয়তাবোধ ও কঠোর শৃঙ্খলা সঞ্চারিত করেছিল।

অর্থনৈতিক সংস্কার

লেফেভর (Lefebvre), মাতিয়ে (Mathiez) প্রমুখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সন্ত্রাসের শাসনের প্রয়োজন ছিল। এঁরা মনে করেন সন্ত্রাসের শাসনের জন্যই ফ্রান্সে কালোবাজারি দমন, সর্বোচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ন্যায্য হারে কর আদায় ইত্যাদি সম্ভব হয়েছিল।

কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি

সন্ত্রাসের সংগঠকেরা দেশত্যাগী অভিজাতদের জমিগুলি দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করেন এবং সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে গতিশীলতা এনেছিলেন।

বিপ্লবকে রক্ষা

সন্ত্রাসের সংগঠকেরা ‘সন্দেহের আইন’ (Law of Suspect) ও নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে বিপ্লবকে রক্ষা করেছিল। এজন্যই ঐতিহাসিক টেলর (Taylor) বলেছেন, ‘সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেছিল’ (The Terror saved the Revolution)

সন্ত্রাসের শাসনের কুফল

সন্ত্রাসের শাসনের নানা কুফলও ছিল বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন। ঐতিহাসিক তেইন (Taine) মনে করেন, সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল মূলত ক্ষমতালোভী, সুবিধাভোগী ও দুর্বিনীত এক শ্রেণির মানুষের ক্রিয়াকলাপ। তাঁর মতে, সন্ত্রাসের শাসনে নিরাপত্তা বলে কিছু ছিল না, কারণ কেবল সন্দেহের বশেই বিনা বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। বলা হয়, “সন্ত্রাস দিয়ে বিপ্লব তার নিজের সন্তানদের গিলে ফেলে (The Revolution devoured its own children)।

ডেভিড থমসনের (David Thomson) মতে, সন্ত্রাসের শাসনে নিহত মানুষের ৭০%-ই ছিল কৃষক ও মেহনতি মানুষ। জনৈক ঐতিহাসিকের মতে, সন্ত্রাসের রাজত্বকালে ফ্রান্সে চলেছিল কসাইবৃত্তির ঘৃণ্য মহামারি। এই সময়কালে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। রোবসপিয়র (Robespierre) গির্জাকে ‘যুক্তির মন্দির’ (Temple of Reason) বলে তুলে ধরেন। তাদের কার্যকলাপ ক্রমশ ফ্রান্সের মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। তাই লুই ব্ল্যাঙ্ক (Louis Blanc)-এর মতে “সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেনি, সন্ত্রাস বিপ্লবকে পঙ্গু করে দেয়।”

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায়, ফ্রান্সের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্রান্সে সন্ত্রাসের মতো কঠোর শাসনের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ‘মহাসন্ত্রাস’ ছিল অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের অবসানে যখন সন্ত্রাসের কঠোরতা হ্রাসের প্রয়োজন ছিল তখন রোবসপিয়র ‘লাল সন্ত্রাস’ (Red Terror) চালু করে দেশে নতুন করে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিলেন। তাই বলা যায়, সন্ত্রাসের শাসন ছিল ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলের সমষ্টি।

Read More – An Astrologer’s Day MCQ

Leave a Comment