ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো – ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভা কর্তৃক সংবিধান রচনার কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল- শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচারবিভাগীয় সংস্কার ও ধর্মীয় সংস্কার।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো পড়ে নেওয়া যাক।

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো
ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো

ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো

ভূমিকা

ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেন। এই অধিবেশনে সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিদের মাথাপিছু ভোটদানের দাবি না মানলে তারা নিজেদের সভাকে জাতীয় সভা (National Assembly) বলে ঘোষণা করে এবং টেনিস কোর্টের শপথ (২০ জুন, ১৭৮৯ খ্রি.) নিয়ে নতুন সংবিধান রচনার অঙ্গীকার করে। এই অবস্থায় সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির দাবি মেনে নিয়ে তিন শ্রেণির যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে জাতীয় সভা ‘সংবিধান সভা’ (Constituent Assembly)-য় রূপান্তরিত হয়।

সংবিধান রচনা

বিপ্লবের যুগে ফরাসি সংবিধান সভা দু-বছরের (১৭৮৯-১৭১১ খ্রি.) চেষ্টায় একটি সংবিধান রচনা করে। এই সংবিধান রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লাফায়েৎ, মিরাবো, ট্যালির‍্যান্ট, রোবসপিয়র প্রমুখ প্রথম সারির নেতারা। তাঁদের রচিত সংবিধানই ছিল ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান।

সংবিধান সভার কার্যাবলি

সংবিধান সভা মূল সংবিধান রচনার আগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল-

  • সামন্তপ্রথার বিলোপ : সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট এক ঘোষণার দ্বারা ফ্রান্সের সামন্তপ্রথা, সামন্ত কর, বেগার শ্রম প্রভৃতি বিলোপ করে।
  • ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা : সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, স্বাধীনভাবে বাঁচা মানুষের জন্মগত অধিকার, আইনের চোখে সবাই সমান প্রভৃতি। ঐতিহাসিক গুলার (Aulard)-এর মতে এই ঘোষণাপত্রটি ছিল ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ান্য (The Declaration was a death certificate of the Old Regime)

সংবিধান সভার সংস্কারকার্য

১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভা কর্তৃক সংবিধান রচনার কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল- শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচারবিভাগীয় সংস্কার ও ধর্মীয় সংস্কা।

  • শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সংবিধান সভার সংস্কারমূলক কাজগুলি হল- ফ্রান্সের রাজার ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করা হয়। শাসন, আইন ও বিচারবিভাগকে পৃথক করা হয়। সমগ্র ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে (ডিপার্টমেন্ট) বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রদেশকে আবার জেলা, ক্যান্টন ও কমিউনে ভাগ করা হয়।
  • অর্থনৈতিক সংস্কার : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি হল- অ্যাসাইনেট (Assignat) নামে একপ্রকার কাগজের নোট প্রচলন করা হয়। ফ্রান্সের গির্জার সকল ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সারাদেশে একই ধরনের ওজন, মাপ ও শূদ্ধব্যবস্থা চালু করা হয়।
  • বিচারবিভাগীয় সংস্কার : বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ হল আইনের চোখে সকলেই সমান- এই নীতি চালু করা হয়, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের অধিকার স্বীকৃত হয়, নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ ও তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
  • ধর্মীয় সংস্কার : ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংবিধান সভার উল্লেখযোগ্য কাজগুলি হল ফ্রান্সের গির্জা ‘গ্যালিকান গির্জা’ (Galican Church) নামে পরিচিত হয় এবং আইনের মাধ্যমে গির্জাকে রাষ্ট্রের অধীনে আনা হয় – যাজক ও বিশপদের নির্বাচন করার অধিকার জনগণকে দেওয়া হয়। বিশপ ও যাজকদের সরকারি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

মন্তব্য

সংবিধান সভার কার্যাবলি ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সংবিধান সভা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সের জনগণের হাতে ক্ষমতা প্রদান করেছিল।

আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি আলোচনা করো -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment