এমস টেলিগ্রাম (Ems Telegram / Ems Dispatch) কী? এর পটভূমি কী ছিল? এর ফল কী হয়েছিল? |
এমস টেলিগ্রাম
প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ম (William 1) এমস (Ems) নামক স্থান থেকে তাঁর প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি খবর পাঠান (১৩ জুলাই, ১৮৭০ খ্রি.)। এর বিষয় ছিল ফরাসি দূত বেনেদিতি-র (Benedetti) সঙ্গে রাজা প্রথম উইলিয়মের আলোচনার সারসংক্ষেপ। এটি ইতিহাসে ‘এমস টেলিগ্রাম’ (Ems Telegram) নামে খ্যাত। এর ফলে ফ্রান্সের সঙ্গে প্রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং জার্মানির ঐক্য সম্পূর্ণ হয়েছিল।
এমস টেলিগ্রামের পটভূমি
একটি বহির্দেশীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমস টেলিগ্রামের পটভূমি রচিত হয়েছিল। ঘটনাটি হল-
স্পেনের সিংহাসন নিয়ে বিরোধ
স্পেনের রানি ইসাবেলা (Isabella)-র বিরুদ্ধে স্পেনে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং রানি সিংহাসনচ্যুত হন (১৮৬৮ খ্রি.)। এই সময় স্পেনীয়রা প্রাশিয়ার হোহেনজোলার্ন (Hohenzollern) রাজবংশের প্রিন্স লিওপোল্ড (Leopold)-কে স্পেনের রাজা হওয়ার জন্য অনুরোধ করে। লিওপোল্ড ছিলেন প্রাশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনির পুত্র।
ফ্রান্সের বিরোধিতা
স্পেনের সিংহাসনে লিওপোল্ডের মনোনয়নে ফ্রান্স বিরোধিতা করে। কারণ ফ্রান্সের পূর্বদিকে জার্মানি এবং পশ্চিমদিকে স্পেনে জার্মান হোহেনজোলার্ন বংশের রাজা লিওপোল্ড সিংহাসনে বসলে ফ্রান্সের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে ফ্রান্সের বিরোধিতায় লিওপোল্ড স্পেনের এই প্রস্তাবে রাজি হননি।
প্রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি লাভের জন্য ফ্রান্সের চেষ্টা
ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন এতেও সন্তুষ্ট হননি। তিনি প্রাশিয়ার রাজা প্রথম [ উইলিয়মের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন যে, জার্মান হোহেনজোলার্ন বংশের কেউ কখনও স্পেনের সিংহাসনে বসবে না।
এমস-এ আলোচনা
ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের নির্দেশ অনুসারে ফরাসি দূত কাউন্ট বেনেদিতি (Count Benedetti) প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়মের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চান। প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ম তখন এমস (Erms) নামক স্থানে বিশ্রামরত ছিলেন। বেনেদিতি এমস-এ গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করেন। রাজা অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁকে জানিয়ে দেন যে, এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
এমস টেলিগ্রাম ও পরিবর্তিত বিষয় প্রকাশ
প্রাশিয়ার রাজা আলোচনার বিষয়টি টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁর প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে জানিয়ে দেন (১৩ জুলাই, ১৮৭০ খ্রি.)। কুটনীতিবিদ বিসমার্ক টেলিগ্রামের কিছু শব্দ বাদ দিয়ে টেলিগ্রামটি এমনভাবে সাজান যাতে মনে হয় প্রাশিয়ার রাজা ফরাসি দূত বেনেদিতিকে অপমান করেছেন। পরের দিন বিসমার্ক এটি নর্থ জার্মান গেজেট (North German Gazette) ও অন্যান্য সংবাদপত্রে প্রকাশ করে দেন (১৪ জুলাই, ১৮৭০ খ্রি:)।
এমস টেলিগ্রামের ফলাফল
প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের যুদ্ধ ঘোষণা
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ফরাসি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন (১৫ জুলাই, ১৮৭০ খ্রি.)।
ফ্রান্স-প্রাশিয় যুদ্ধ
অপ্রস্তুত ফ্রাব্দ হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করায় প্রাশিয়ার কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। ফ্রাঙ্কফোর্ট সন্ধি (Peace of Frankfurt, ১০ মে, ১৮৭১ খ্রি.) এর মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ঐক্যবদ্ধ আর্মানির আত্মপ্রকাশ
জার্মান জাতি অধ্যুষিত আলসাস ও লোরেন জার্মানির সঙ্গে যুক্ত হয়। প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ম জার্মানির সম্রাট বা ‘কাইজার’ (Kaisar) বলে ঘোষিত হন।