জুলাই বিপ্লবের কারণগুলি আলোচনা করো | এর গুরুত্ব কী ছিল
জুলাই বিপ্লবের (July Revolution) কারণগুলি আলোচনা করো। এর গুরুত্ব কী ছিল? |
ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লব একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। অষ্টাদশ লুই-এর (১৮১৪-১৮২৪ খ্রি) পর তাঁর ভাই দশম চার্লস (Charles X, ১৮২৪-১৮৩০ খ্রি.) ফ্রান্সের সম্রাট হন। দশম চার্লসের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে যে বিপ্লব ঘটে, তা ইতিহাসে ‘জুলাই বিপ্লব’ (July Revolution) নামে পরিচিত।
জুলাই বিপ্লবের কারণ
জুলাই বিপ্লবের পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল-
বুরবো বাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা
ভিয়েনা সম্মেলনের ন্যায্য অধিকার নীতি অনুযায়ী ফ্রান্সে বুরবো বংশীয় অষ্টাদশ লুই সিংহাসনে বসেন। তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বন করে পুনঃস্থাপিত রাজতন্ত্রের সঙ্গেঙ্গ বিপ্লবী ভাবধারার মেলবন্ধনে এক নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু অস্টাদশ লুই-এর সঙ্গেঙ্গ সঙ্গে দেশত্যাগী অভিজাতরাও ফ্রান্সে ফিরে আসেন। অভিজাতরা তাদের হারানো সম্পত্তি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হলে ফরাসি জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
অষ্টাদশ লুই এর স্বৈরাচারিতা
দশম চার্লসের প্রতিক্রিয়াশীল নীতি
১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে অষ্টাদশ লুই-এর মৃত্যুর পর ডিউক অফ আর্টয়েস (Duke of Artois) দশম চার্লস উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন উগ্র রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ও পুরাতনতন্ত্রের সমর্থক। সিংহাসনে বসেই তিনি অষ্টাদশ লুইয়ের সনদ বাতিল করে দেন। বিপ্লবের সময় যে সমস্ত অভিজাতরা দেশত্যাগ করেছিল তাদের পুনর্বাসন ও আর্থিক ক্ষতি তিনি ফ্রান্সের রাজকোশ থেকে মেটান। শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মযাজকদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জেসুইটদের দেশে ফিরিয়ে এনে উচ্চপদ দান করেন। ফলে ফরাসিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে।
পলিগন্যাকের (Polignac) ভূমিকা
১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে। দ দশম চার্লস পলিগন্যাক-কে প্রধানমন্ত্রী। পদে নিযুক্ত করেন। পলিগন্যাক বিপ্লবপ্রসূত সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি নাকচ করে প্রাক-বিপ্লব শাসনব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে উদারপন্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়। তারা পলিগন্যাকের অপসারণের দাবি জানালে রাজা তাদের বিরোধিতা করে আইনসভা ভেঙে দেন।
প্রত্যক্ষ কারণ
- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।
- আইনসভা ভেঙে দেওয়া হয়।
- ভোটাধিকার সংকুচিত করা হয়।
- বুর্জোয়া শ্রেণিকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, কেবল সম্পত্তিবান অভিজাতরাই ভোটদানের অধিকার পায় এবং
- আইনসভার নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়।
বিপ্লবের সূচনা
এই অর্ডিন্যান্স জারির সঙ্গে সঙ্গে উদারপন্থী নেতা অ্যাডলফ থিয়ার্সের (Adolphe Thiers) নেতৃত্বে প্যারিসের জনসাধারণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২৮ জুলাই বিদ্রোহী জনতা প্যারিসের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। ৩০ জুলাই বিদ্রোহী জনসাধারণ দশম চার্লসকে সিংহাসনচ্যুত করে অলিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপকে (Louis Philippe) রাজা ঘোষণা করে। এইভাবে মাত্র তিনটি দিনের (২৭-২৯ জুলাই) মধ্যে জুলাই বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছিল।
জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব
ইউরোপের ইতিহাসে জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রথমত, জুলাই বিপ্লবের ফলে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের অধিকার বিলুপ্ত হয়।
দ্বিতীয়ত, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃতি লাভ করে।
তৃতীয়ত, এই বিপ্লবের প্রভাব ফ্রান্সের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত হয়। প্রায় একই সঙ্গে ইটালি, জার্মানি ও পোল্যান্ডে জাতীয় আন্দোলন শুরু হয়। অবশ্য শাসকরা এই বিদ্রোহগুলি কঠোর হাতে দমন করেন। একমাত্র বেলজিয়ামের বিপ্লব সাফল্য লাভ করে। জুলাই বিপ্লবের প্রভাবে গ্রিস, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে আন্দোলন হয়। জুলাই বিপ্লব ইউরোপের পুরাতনতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে না পারলেও এর ভিত্তি যে দুর্বল করেছিল তা অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো
Ok thanks for ✨👍
Welcome