টীকা লেখো: সন্ত্রাসের রাজত্ব |
ফ্রান্সে রোবসপিয়র-এর নেতৃত্বে জেকোবিন দল ১৭৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দে যে শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল, তা ইতিহাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব বা সন্ত্রাসের শাসন (Reign of Terror) নামে পরিচিত। এই সন্ত্রাসের রাজত্ব ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত মোট ১৩ মাস ধরে চলেছিল।
পটভূমি
- ফ্রান্সের ‘জাতীয় মহাসভা’ (ন্যাশনাল কনভেনশন) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ষোড়শ লুইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর ফলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, পোর্তুগাল প্রভৃতি দেশগুলি একজোট হয়ে ফ্রান্সের বিরোধিতা করে।
- ফ্রান্সের অভ্যন্তরে ৮৩টি প্রদেশের মধ্যে ৬০টি প্রদেশে বিদ্রোহ শুরু হয়।
- তা ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। এই অবস্থায় প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য রোবসপিয়র সন্ত্রাসের শাসন শুরু করেন।
উদ্দেশ্য
সন্ত্রাসের রাজত্বের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-
- ভীতি প্রদর্শন করে ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা।
- ফ্রান্সের অভ্যন্তরে কালোবাজারি ও মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা।
- অভিজাত ভূস্বামীদের জমি বাজেয়াপ্ত করে তা কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা।
- বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন ও অস্ত্র কারখানা তৈরি করে ফ্রান্সের নিরাপত্তা ও সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সন্ত্রাসের ভয়াবহতা
সন্ত্রাসের রাজত্বকালে প্রায় ৫০ হাজার নিরনারীকে গিলোটিন যন্ত্রে হত্যা করা হয়। সন্দেহের আইনে (Law of Suspect) প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। আরও অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান- যাদের অনেককে জলে ডুবিয়ে বা অন্যভাবে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়।
অবসান
১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই জেকোবিন, জিরন্ডিন ও মধ্যপন্থী দলের আতঙ্কিত সদস্যরা রোবসপিয়র ও তাঁর অনুগামীদের বন্দি করে। ২৮ জুলাই রোবসপিয়র ও তাঁর অনুগামীদের গিলোটিন যন্ত্রে হত্যা করা হয়। ফলে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ঘটে।