‘আর সেই মেয়েটির অপেক্ষায়।’- অপেক্ষারত সে মেয়েটির মধ্য দিয়ে কবি স্বদেশপ্রেম তথা মানবপ্রেমের যে শাশ্বতরূপ তুলে ধরেছেন, তা আলোচনা করো। |
স্বদেশের রূপ
পাবলো নেরুদা ‘অসুখী একজন’ কবিতায় স্বদেশপ্রেম তথা মানবপ্রেমের শাশ্বতরূপ প্রকাশ করেছেন। দেশ মানে তো শুধু ভূখণ্ড নয়, সে যে মানুষের সহাবস্থান-আশ্রয়ভূমি।
প্রতীক্ষা
নানাকারণেই মানুষ স্বদেশ ছেড়ে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফিরে আসার তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ ফিরতে পারে না। যেমন পারেননি আলোচ্য কবিতার কথক। গৃহযুদ্ধের অনিবার্য কারণে তিনি স্বদেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন দূরে। দরজায় অপেক্ষায় রেখে গেছেন তার প্রিয় মানবীকে। সেই মানবীই যেন তার স্বদেশ বা মূর্ত মানবতা। সাধারণ ঘটনাধারার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে বছরের পর বছর।
তারপর একসময় কবি তথা কথকের স্বদেশে যুদ্ধ লাগল। সর্বগ্রাসী ধ্বংস ও বীভৎসতায় বিপর্যস্ত হল প্রিয় স্বদেশ-
যুদ্ধ ও মানবতা
অপেক্ষারত সেই মেয়েটি তো আসলে মাতৃভূমি, মানবতার প্রতীক। সে তো মৃত্যুহীন। কথকের স্মৃতিবিজড়িত ‘সেই মিষ্টি বাড়ি’, বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেলে বেঁচে রইল মেয়েটি। যুদ্ধ যতই ভয়ংকর হোক, মানবপ্রেম ও স্বদেশপ্রেমকে সে নিঃশেষ করতে পারে না।
স্বদেশপ্রেম
কবি স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল। তিনি জানেন মানুষের মৃত্যু হলেও মানবতার মৃত্যু নেই। স্বদেশের প্রতি মানুষের আবেগ-আকর্ষণ-ভালোবাসা শাশ্বত। যুদ্ধ বা ধ্বংসই শেষ কথা নয়। যুদ্ধের বীভৎসতা, বিচ্ছেদের বেদনা সত্ত্বেও জীবনমুখী কবি অপেক্ষারত সেই মেয়েটির মধ্য দিয়ে স্বদেশপ্রেম তথা মানবপ্রেমের শাশ্বত রূপটি আলোচ্য কবিতায় তুলে ধরেছেন।