পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা 500+ শব্দে

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
 
“যাহারা তোমায় বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো 
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছো ভালো?”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

এই হৃদয়মোহিনী বিশ্বপ্রকৃতিই আপামর জীবনের প্রাণভমরা। কখনও সে বৈচিত্র্যে বৈচিত্র্যে অনন্যা, কখনও সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠায় ‘Suffocating sensuousness’-এর স্বপ্নরাজ্য। সুন্দর এই বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি অপার ভালোবাসায় সে কারণে যেন যে-কোনো মানুষেরই প্রবল দাবি-

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, 
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কিন্তু আজকের দিনে মানুষের সেই দাবিটুকু নস্যাৎ হতে বসেছে। তার পিছনে রয়েছে পরিবেশের নানান উপাদানের দূষণ।

পরিবেশ দূষণ কী

আমাদের চারপাশে থাকা আকাশ-বাতাস-জল-স্থল- মনমানসিকতা-সমাজ-সংস্কৃতি’ মিলিয়ে যে বৃহৎ জগৎ সমগ্র জীবকুলকে, বিশেষ করে আমাদেরকে বাঁচার সুযোগ করে দেয়, তাকে বলা হয় পরিবেশ। সেই পরিবেশের নানান উপাদান কোনো-না-কোনোভাবে দূষিত ও বিপন্ন হলে তাকে ধরা হয় পরিবেশ দূষণ। এই দূষণ দুই প্রকার – প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম।

পরিবেশ দূষণের শুরু

পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে পরিবেশ ছিল বর্তমানের থেকে অন্যরকম। জীবজগতের সৃষ্টির পরে সভ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবেশ বার বার পালটেছে। সেটাই জগতের নিয়ম। কেননা-

সময় মুছিয়া ফেলে সব এসে।
সময়ের হাত’
-জীবনানন্দ দাশ

সেই ধারা পথে প্রাকৃতিক পর্যায়ের দূষণ চিরকালই সঙ্গী ছিল। কিন্তু যেদিন থেকে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছে, সেদিন থেকেই ধরা যেতে পারে কৃত্রিমভাবে পরিবেশ দূষণের শুরু।

পরিবেশ দূষণের কারণ

পরিবেশের রয়েছে বায়ু-জল-মাটি-শব্দ-দৃশ্য-সমাজ- এরকম নানান উপাদান। আর সেগুলো দুষিত হবার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। যেমন-

(ক) বায়ুদূষণ
: বায়ু হল পরিবেশের অন্যতম উপাদান। এই বায়ুতে মিশে থাকা অক্সিজেন গ্রহণ করেই জীবকুল বেঁচে থাকে। কিন্তু নিউক্লীয় আবর্জনা, কাঠ, কয়লা, তেল ইত্যাদি পুড়িয়ে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড; কলকারখানা, গাড়ি, বিমান প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, অরণ্য ধ্বংসের ফলে পরিবেশে অক্সিজেন কমে যাওয়া ইত্যাদির কারণে বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে।

(খ) জলদূষণ: জল ছাড়া মানুষ বাঁচে না। কিন্তু কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শস্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা কীটনাশক বৃষ্টির জলে ধুয়ে গিয়ে জলে পড়া, নানান দুর্ঘটনায় সমুদ্রের জলে তেল ছড়িয়ে যাওয়া, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বৃষ্টির জল বাহিত হয়ে ভারী ধাতু, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি পুকুর, নদী ও সমুদ্রের জলে মিশে যাওয়া, জলে কাপড় কাচার ফলে ক্ষার মিশে যাওয়া ইত্যাদি কারণে জল দূষিত হয়।

(গ) শব্দদূষণ: নানান ধরনের যানবাহনের এবং কলকারখানার আওয়াজ, বাজি, মাইক ইত্যাদির প্রবল আওয়াজ শব্দদূষণের অন্যতম কারণ।

(ঘ) মাটিদূষণ: মাটিতে ব্যাপক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, প্লাস্টিকজাত বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ক্রমাগত মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়ে চলেছে।

(ঙ) দৃশ্যদূষণ: রাস্তায় টাঙানো বড়ো বড়ো হোডিং, ফেস্টুন অর্থাৎ বিজ্ঞাপনের ব্যানার, কুরুচিকর ছবি ইত্যাদি দৃশ্যদূষণ ঘটায়।

(চ) সাংস্কৃতিক দূষণ: আজকের দিনে যুব সমাজের সামনে ইন্টারনেট, চলচ্চিত্র, কুরুচিকর গ্রন্থ, অশ্লীল পোশাকআশাক ইত্যাদি অপ্রতুল নয়। তারাই অনেকাংশে ঘটাচ্ছে সাংস্কৃতির দূষণ।

পরিবেশ দূষণের ফলাফল

নানান ধরনের প্রাকৃতিক দূষণ মানুষের জীবনে ক্ষতিকারক প্রভাব তো ফেলেই, মানুষের সৃষ্ট বায়ুদূষণ ও জলদূষণ ডেকে আনে ক্যানসার, হাঁপানি, টিবি ইত্যাদি অসুখ। আবার শব্দদূষণ মানসিক রোগ ও বধিরতা ডেকে আনে। মাটিদূষণ তৈরি করে চর্মরোগ ও অন্যান্য অসুখবিসুখও। দৃশ্যদূষণ ও সাংস্কৃতিক দূষণে মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার

পরিবেশ দূষণের প্রতিকারে প্রথমেই ভাবতে হবে পরিবেশের উপাদানগুলো যাতে কোনোভাবেই দূষিত না হয়, তার কথা। তারপরে ভাবতে হবে অরণ্য ধ্বংস প্রতিরোধ এবং নতুন অরণ্য সৃষ্টির কথা। এছাড়া ওজন স্তরের ঘনত্ব যাতে হ্রাস না পায়, শব্দের মাত্রা যাতে কমানো যায়, মাটিতে রাসায়নিক প্রয়োগ যাতে কম করা যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। টিভি, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেটকে অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অবশ্য প্রচেষ্টা কম চলছে না। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্টকহোমে ৫ জুন তারিখটিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ধরে নেওয়া হয়। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ‘United Nations Conference for ecology and development পরিবেশ দূষণের প্রতিকারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছিল।

উপসংহার

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ভারতসহ চারদিকে যেভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার ফলাফল এখনই সম্পূর্ণভাবে না মিললেও এটুকু আশা করা অসঙ্গত হবে না- ভবিষ্যতে শুভ ফল মিলবেই মিলবে। আমরা সেই শুভ ফলের অপেক্ষায় থাকব।

Leave a Comment