দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা |
ভূমিকা
একটি নৌকা যেমন বইঠার সাহায্যে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, সভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের কাজ ও অনেকটা সেরকম। সেই আদিমকালে মানুষ কর্তৃক আগুন আবিষ্কারের ভিতর দিয়ে যে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তা সুদূরপ্রসারিত, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় এবং সার্বিক অগ্রগতির এক সোপান। এ সম্পর্কে এক বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী বলেছেন-
বিজ্ঞানের এই জয়যাত্রা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কল্যাণকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞানের সূচনা ও অগ্রগতি
সামগ্রিক অর্থে বিজ্ঞান এমন একটি বিশেষ জ্ঞান, যা যুক্তি, অভিজ্ঞতা, প্রমাণ এবং প্রয়োগ-নির্ভর। খ্যাতিনামা বিজ্ঞানী এমার্সন আবার বলেছেন-Science suppresses the old miracles of mythol- ogy.’ এই বিশেষ জ্ঞানের প্রসারে এবং ব্যবহারিক প্রয়োগে জীবন উন্নত হয় মানবসভ্যতারও বিপুল অগ্রগতি ঘটে। এই বিজ্ঞানের সূচনা ঘটেছিল আধুনিককালে মানুষ যখন আগুনের ব্যবহার শিখেছিল, তখন থেকে। তারপর উৎসাহী মানুষদের নানানভাবে বিজ্ঞানসাধনার ভিতর দিয়ে ঘটে গিয়েছে বিজ্ঞানের বিপুল অগ্রগতি। ক্রমশ ঘটেছে কৃষিবিপ্লব, শিল্পবিপ্লব, চিকিৎসাবিপ্লব। ঘটে গিয়েছে যাতায়াত, যোগাযোগ, বিনোদন, জ্ঞানবিকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন। সবই ঘটেছে বিজ্ঞানের হাত ধরে।
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার দিক
সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সময়টুকু জুড়ে মানুষের যে জীবনযাত্রা রোজ রোজই চলতে থাকে, রোজকার সেই জীবনযাত্রাকেই বলা হয় মানুষের প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবন। সকালে উঠে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা, তারপর চা খাওয়া, সকালের জলখাবার খাওয়া, খবরের কাগজ পড়া, গাড়ি বা সাইকেলে চড়ে বাজার করা, ফিরে এসে ট্রেনে-বাসে-গাড়িতে অফিস যাওয়া বা কাজে যাওয়া, বিকালে বা সন্ধ্যায় বিনোদন, অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানো, রাতে বিছানায় শুতে যাওয়া, প্রয়োজনে যখন-তখন মোবাইল ব্যবহার ইত্যাদি কাজগুলো ছাড়াও সারাদিনে যে-কোনো মানুষের রোজকারের কাজকর্ম এই পর্যায়ে পড়ে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার
সব মানুষের জীবনযাত্রা, কাজকর্ম ইত্যাদি কখনও একরকম হয় না। কিন্তু বিজ্ঞান সবার ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন বা প্রাত্যহিক জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ। সামগ্রিক বিচারে বিজ্ঞানের সেই অপরিহার্যতার – দৃষ্টান্তগুলো হল-
(ক) দিনের শুরুতে: দিনের শুরুতে টয়লেট ব্যবহার, ট্যাপ ও টিউবওয়েলের ব্যবহার, পেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁতমাজা, ওভেনে করা চা-জলখাবার, মেশিনে ছাপা সংবাদপত্র পড়া, ঘড়িতে সময় দেখা, পরনের কাপড় ব্যবহার, প্রয়োজনীয় ফোনের ব্যবহার, সাইকেলে চেপে বাজার করা, গাড়িতে চেপে অফিস যাওয়া, চাষের ক্ষেত্রে ট্রাক্টর ব্যবহার, জমিতে সার প্রয়োগ, পাম্পে জলসেচ, ধানকাটা মেশিন ব্যবহার, অফিসে কম্পিউটার ব্যবহার, অসুস্থতার কারণে ওষুধ খাওয়া, প্রয়োজনে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ব্যবহার, যাতায়াতে সিড়ি-লিফট-এসকালেটর ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানই মানুষকে জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতি দান করেছে।
(খ) দিনের দ্বিতীয়ার্ধে দিনের দ্বিতীয়ার্ধে আমরা প্রাত্যহিকভাবে যেসব কাজকর্ম করি, তার মধ্যে রান্নাঘরের সরঞ্জাম, খাওয়ার বাসনপত্র, গরম থেকে বাঁচতে ব্যবহৃত এয়ারকুলার, ফ্যান, গিজার, এয়ারকন্ডিশনার, দুপুরে স্নান করার সাওয়ার, বালতি, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহৃত বইপত্র, কলম, বই পড়ার জন্য ব্যবহৃত চশমা, লেন্স ইত্যাদি বিজ্ঞানই দান করেছে।
(গ) দিনের শেষার্ধে: দিনের শেষার্ধে বা অন্য সময় বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত খেলার সরঞ্জাম, রেডিয়ো, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, রাতের অন্ধকার দূর করার আলোর তার, বালব, আলো, বসার টেবিল-চেয়ার, শোবার বিছানা, বালিশ ইত্যাদি বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া পাওয়া সম্ভব হত না।
– এসব ছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও অনেক কিছুই আমরা ব্যবহার করে থাকি। বিজ্ঞানই সেগুলো আবিষ্কার করে সবাইকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানে অতিনির্ভরতার অসুবিধা
আজকের দিনে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অতিনির্ভরতা কখনো কখনো উপকারের বদলে অপকারই করছে। যেমন- মানুষের মধ্যে কষ্ট করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে আত্মশক্তি। বাড়ছে আত্মকেন্দ্রিকতা, পরনির্ভরশীলতা। এর পাশাপাশি মানুষজন যজন নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে কৃত্রিম অভাববোধ।
উপসংহার
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ওপরে অতিনির্ভরতা মানবজীবনে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করলেও সামগ্রিক দিক দিয়ে বিজ্ঞানের কল্যাণকর ভূমিকাই মুখ্যতম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই বলেছেন-
তবে দুঃখের কথা এই যে, দারিদ্র্যের কারণে আজও বহু মানুষ বিজ্ঞানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দারিদ্রদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব না হলে সে সুবিধা তাদের কাছে অধরাই থেকে যাবে।
আরও পড়ুন – 1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারণ গুলি কী ছিল