আমার প্রিয় কবি রচনা 500+ শব্দে

আমার প্রিয় কবি রচনা

আমার প্রিয় কবি রচনা
আমার প্রিয় কবি রচনা

 

‘আলো অন্ধকারে যাই-মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে;’
-জীবনানন্দ দাশ

ভূমিকা

কবিতা হল যে-কোনো কবির হৃদয়ানুভূতির এক মন্ময় প্রকাশ। সেই মন্ময়তা পাপড়ি মেলে বুদ্ধি ও বোধির সমন্বয়ে। সেরকম কোনো কবির কবিতার ভাব, ভাষা, মন্ময়তা যদি পাঠকের হৃদয়কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে, তাহলে সেই কবি হয়ে উঠতে পারেন প্রিয়র থেকে প্রিয়। বাংলা ভাষার রোমান্টিক কবি জীবনানন্দ দাশ হলেন আমার প্রিয় সেরকমই একজন কবি।

জন্ম-পরিচয়

জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তারিখে। তাঁর বাবার নাম ছিল সত্যানন্দ দাশগুপ্ত (দাশ) এবং মায়ের নাম ছিল কুসুমকুমারী দেবী।

শিক্ষা ও পেশা

বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (১৯১৫), ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই. এ. (১৯১৭), কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্সসহ বি. এ. (১৯১৯) এবং কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিষয়ে  এম.এ. (১৯২১) পাশ করেন তিনি এবং অধ্যাপনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।

রচিত কাব্যগ্রন্থ

তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় ১৩২৬ বঙ্গাব্দে। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’। তারপর একে একে লিখে গিয়েছেন- ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘বনলতা সেন’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘রূপসী বাংলা’, ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ প্রভৃতি কাব্য।

কেন প্রিয়

আমি আধুনিক কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক। জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলোর নানান গুণে আমি বার বার মুগ্ধ হই। তিনি আমার কাছে কেন প্রিয় কবি, সে সম্পর্কে কিছু কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে-

(ক) সৌন্দর্যচেতনা:
জীবনানন্দের কবিতাগুলোতে সৌন্দর্যের অনুভব, তার অভিনব স্বাতন্ত্র্য স্মরণ করিয়ে দেয় রোমান্টিক কবি কীটস্-এর সেই অমোঘ উদ্ধৃতি-

Beauty is truth, truth is beauty, that is all 
Ye know on earth, and all ye need to know.

সত্য ও সুন্দরের এই চেতনায় জীবনানন্দ রচনা করেছেন ‘বনলতা সেন’-এর মতো কাব্য। সেখানে কোথাও তাঁর ‘পৃথিবীকে মায়াবী নদীর পারের দেশ ব’লে মনে হয়’ (আমাকে তুমি), আবার কোথাও তিনি উচ্চারণ করেন-

‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;”
-(বনলতা সেন)

(খ) প্রকৃতিচেতনা: প্রকৃতি তাঁর কবিতায় রোমান্টিক আবহে ভাস্বর হয়ে উঠেছে। বাংলা প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা নিয়ে কখনও তাঁকে লিখতে দেখি-

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ 
খুঁজিতে যাই না আর, ‘-(বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি)

কখনও বা তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়-

‘এখানে আকাশ নীল-নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম শাদা-রং তার আশ্বিনের আলোর মতন’;
(এখানে আকাশ নীল)

আসলে রূপসী বাংলার রূপ-রস-গন্ধ, বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা জীবনানন্দ দাশের কিছু কবিতাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

(গ) ইতিহাসচেতনা:
জীবনানন্দের ইতিহাসচেতনা আমাকে বার বার আকর্ষণ করে। পুরাণ বা Myth-এর প্রয়োগে তিনি ঐতিহ্য, ব্যক্তি ও স্বদেশকে মিলিয়ে দিয়েছেন। সত্য ও সুন্দরের সন্ধানে তাঁর পথ হাঁটা তাই যেমন শেষ হয় না, তেমনি স্পষ্ট ঘোষণা করতেও তিনি পিছপা হন না-

‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে’
(বনলতা সেন)

(ঘ) মৃত্যুচেতনা: জীবনানন্দের কাব্য-কবিতার কোথাও কোথাও মৃত্যুচেতনার নিজস্ব দর্শন প্রকাশ করেছেন কবি। মৃত্যুকে তিনি মেনে নিয়েছেন। যে-কোনো রূপ নিয়ে ফিরে আসতে চেয়েছেন পৃথিবীতে। তাই কবিতায় দেখি তিনি লিখেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটি তীরে-এই বাংলায়’। এমনভাবে কেউ কি লিখেছেন? মনে হয় না।

(ঙ) আশাবাদ: জীবনানন্দের কবিতা নৈরাশ্যবাদে শেষ হয়নি। তিনি বরং আমাদের সবাইকে হতে বলেছেন জীবনপ্রেমিক। প্রেম তাই তাঁর কাছে স্বাগত।

(চ) অভিনব স্বাতন্ত্র্য: প্রতীক জীবনানন্দ দাশের কবিতায় রোমান্টিকতার অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া পয়ার, গদ্যছন্দ, কখনও শ্বাসাঘাতপ্রধান বা দলযুক্ত ছন্দের ব্যবহার তাঁর কবিতাকে স্বাতন্ত্র্যময় করে তুলেছে। এসব কারণেই তিনি আমার প্রিয় কবি।

উপসংহার

জীবনানন্দ দাশকে কেউ কেউ নির্জনতার কবি বলেও উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু আমার মতে এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। তিনি বরং প্রেম, চেতনা ও নিসর্গের কবি।

Leave a Comment