একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা রচনা 400+ শব্দে

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা
একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা
‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে 
আয় আয় আয়।’
(-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ভূমিকা

মাঝে মাঝে গতির তুফান তুলে মন যেন ছুটে চলে দিক থেকে দিকশূন্যপুরে। তখন ‘দূর পৃথিবীর গন্ধে ভারে ওঠে আমার এ বাঙালির মন’। (-জীবনানন্দ দাশ) আমিও তাই ছুটে যাই এখান থেকে সেখানে। যেমন এবার গেছিলাম শান্তিনিকেতনে। গেছিলাম সেখানকার পৌষমেলা দেখতে। সত্যিই সে এক অন্য অভিজ্ঞতা।

মেলা কী

‘মেলা’ কথাটির সাধারণ অর্থ হল ‘মিলন’। যে-কোনো মেলায় বহু মানুষের মিলন হয় বলে এই ‘মেলা’ নামকরণটি বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে। সেসব দিক বিচার করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

‘মেলা ভারতের পল্লির সার্বজনীন উৎসব। কোনো উৎসব-প্রাঙ্গণের মুক্ত অঙ্গনে সকল গ্রামবাসীর মনের উচ্ছ্বসিত মিলন-স্থান হইল মেলা।’

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য এবং পৃথিবীবিখ্যাত শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাও সেরকমই একটি মেলা।

পৌষমেলার সূচনা কীভাবে

পৌষমেলায় যাব বলে এই মেলা সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করেছিলাম। তা থেকে জানতে পারি- ৭ পৌষ দিনটিতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের বাবা ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। ছাতিমগাছের তলায় তিনি ব্রহ্মোপাসনাও করেন। সেকারণে ওই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার প্রবর্তন ঘটানো হয়।

পৌষমেলায় পৌঁছে যাওয়া

ওইসময় শান্তিনিকেতনে যথেষ্ট ভিড় হয় বলে অনেক আগেই আমার মাসতুতো দাদা অর্ণব আমার আর নিজের জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিল। বুক করে রেখেছিল হোটেলও। মেলা শুরুর দুদিন আগে দুজনে তাই শান্তিনিকেতনে পৌঁছে যেতে ভুল করিনি। আশপাশটাও ভালো করে দেখতে হবে তো। মেলা থেকে কিছুটা দূরে হোটেল ভাড়া নিয়েছি। নির্দিষ্ট দিনে সেখান থেকেই রওনা হলাম। আমাদের বাহন তখন রিকশা। পথে যেতে যেতে দেখতে পেলাম বহু মানুষ চলেছে মেলার দিকে। কেউ বা চলেছে মেলা দেখবে বলে, কেউ বা মালপত্র নিয়ে চলেছে ব্যাবসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। ওদের সঙ্গে আমরাও পৌঁছে গেলাম মেলায়।

পৌষমেলার বর্ণনা

মেলায় পৌঁছে আনন্দে ভরে উঠল আমার মন। পূর্বপল্লির বিশাল মাঠে সে যেন এক জনসমুদ্র। মেলার আয়োজনও দেখলাম কম নয়। চারদিকে অসংখ্য লোকের মাঝে পসার সাজিয়ে বসে রয়েছে দোকানিরা। বেচাকেনা চলছে। মাটির পুতুল, হাঁড়িকলশি, বেতের ও বাঁশের কাজ, কাচের চুড়ি, পাঁপড়ভাজা, চপ-ফুলুরি, জিলিপি, জিবে গজা, খাস্তা গাজা কীসের দোকান নেই সেখানে। সেসবের মাঝে-

‘কী এক প্রগলভ উন্ন উল্লাসের সাড়া।
থেমে যায় পার্শ্ববীণা মুহূর্তে কখন।’
– জীবনানন্দ দাশ

শুধু কী তাই? ঘুরে ঘুরে দেখলাম কোথাও বসেছে বাউলগানের আসর। কোনো বাউল হয়তো সেখানে গান ধরেছে-

‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কী দোষ….’

কোথাও শুরু হয়েছে কবিগান, ম্যাজিক, বেলুন ফাটানোর খেলা। কোথাও নাগরদোলনা মানুষ চড়িয়ে ঘুরপাক খেয়েই যাচ্ছে, খেয়েই যাচ্ছে। একজায়গায় দেখলাম সাঁওতাল ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে গানের তালে তালে নাচছে। কোথাও বা তারা কুটিরশিল্পের নানান সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছে। সেসব আনন্দ, সুখ ও মজার পাশাপাশি দেখলাম কিছু কিছু দুঃখের ছটাও। যেমন- কোথাও বাচ্চা ছেলেমেয়ে নাগরদোলনায় চড়তে না পেয়ে কাঁদছে, কোথাও গরিব দোকানির পয়সা মেরে দিয়ে পালিয়েছে কেউ, কারও বা গাঁটের পয়সা হাতিয়েছে গাঁটকাটার দল। সব মিলিয়ে সে অভিজ্ঞতা অম্ল-মধুর।

উপসংহার

আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের স্বভাবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এই যে, আমরা-

‘এমনিতে বেশ, দিব্যি ভালো
সৌজন্যেও কমতি নেই–‘
-শঙ্খ ঘোষ

সেই বাঙালি জাতির সদস্য হওয়ার কারণে পৌষমেলায় ঘুরতে ঘুরতে আলাপ হল অনেকের সঙ্গেই। তারা বেশির ভাগই স্থানীয় হওয়ায় মেলাটির ঐতিহাসিক ও সামাজিক গুরুত্ব তাদের কাছ থেকে বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি।

আরও পড়ুন1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারণ গুলি কী ছিল

Leave a Comment