কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা 500+ শব্দে

কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা
কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা

 

‘জননীর জাতি, দেবতার সাথি, নারীরে কোরো না হেয়,
অর্ধজগতে কোরো না গো হীন, জগতের সুখ চেয়ো।’
-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

ভূমিকা

মানবতার একনিষ্ঠ পূজারি, নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিতে সমুজ্জ্বল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘মহুয়া’ কাব্যের ‘সবলা’ নামক কবিতায় বিশ্ববিধাতার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন-

‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার 
কেন নাহি দিবে অধিকার
হে বিধাতা?’

বস্তুত এই একবিংশ শতাব্দীতেও নারীরা অনেকাংশেই অবহেলিত থেকে গিয়েছে। এখনও তাদের অনেকেই অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ ও অত্যাচারের শিকার। -এসবের পিছনে দারিদ্র্যের ভূমিকা কম নয়। সেই দিকটা ভেবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাম্প্রতিককালে চালু করেছে একটি বিশেষ প্রকল্প, যার নাম কন্যাশ্রী প্রকল্প।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রথম উদ্যোগ

২০১১ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তনের পর কুমারী মেয়েদের সাহায্য করবার জন্যে সরকারি উদ্যোগে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম চালু হয় কন্যাশ্রী প্রকল্পটি।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য

‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ’ (-জীবনানন্দ দাশ)। কেননা সভ্যতা এগোলেও নারীর প্রতি অবহেলা এখনও রয়ে গিয়েছে। এখনও অশিক্ষা ও অভাবের কারণে বহু মেয়ের উপযুক্ত বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। শিক্ষার আলোর অভাবে বহু মেয়ে আপন ভাগ্য জয় করবার ক্ষমতা হারায়। সভ্যতার আলো তাদের কাছে তাই খুব বেশি একটা পৌঁছায় না। তা ছাড়া অভাবের কারণে তাদের মধ্যে উপযুক্ত খাদ্যের জোগান না থাকায় অপুষ্টিও দেখা দেয়। আর অর্থের অভাবে কত মেয়েই যে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, তার ইয়ত্তা নেই। এই অবস্থায় দুঃস্থ পরিবারের কুমারী মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোই এই কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রাপক

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবার অধিকারী শুধুমাত্র ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সেই মেয়েরা, যারা কুমারী এবং কোনো-না-কোনো বিদ্যালয়ের ছাত্রী। অর্থাৎ অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিবাহিতা ছাত্রীরাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবার যোগ্য।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আর্থিক শর্ত

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবার ক্ষেত্রে কিছু আর্থিক শর্ত রাখা হয়েছে। সেই শর্তটি হল- সুবিধাটি পেতে গেলে ছাত্রীর পারিবারিক বার্ষিক আয় এক লক্ষ কুড়ি হাজারের মধ্যে হতে হবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা

প্রকল্পটির মাধ্যমে তেরো থেকে আঠারো বছর বয়সী কুমারী মেয়েদের প্রতিবছর ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও যেসব মেয়ের বয়স ১৮ বছর পেরিয়েছে কিন্তু ১৯ বছর উত্তীর্ণ হয়নি, সেইসব মেয়ের জন্যে এককালীন ২৫ হাজার টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা

২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর তারিখে প্রকল্পটি চালু হবার পর থেকে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির গরিব ছাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া জেগেছিল। তারা যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুদানগুলো সংগ্রহ করতে পারে, সেজন্যে সরকারের নির্দেশে স্কুলের নির্বাচিত ব্যাংকগুলোর কোনো একটিতে জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খুলে দেবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানেই অনুদানের টাকা জমা পড়ে এবং পড়বে। ছাত্রীরা প্রয়োজন মতো সেখান থেকে টাকা তুলে নেবে, তেমনই আশা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এখনও সেই ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

প্রকল্পটির সমস্যা

কন্যাশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের গাফিলতিতে কিছু গরিব ছাত্রী প্রকল্পটির বাইরে থেকে গিয়েছে। আবার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ঠিক মতো উদ্যোগ না নেবার কারণে বহু ছাত্রী ঠিক মতো অনুদানটি পাচ্ছে না। এছাড়াও এমন অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁদের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল, কিন্তু বার্ষিক আয় কম দেখিয়ে টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছে গরিব ছাত্রীরা।

উপসংহার

কন্যাশ্রী প্রকল্প, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা ভারতেই এক দৃষ্টান্ত স্বরূপ। এটি মেয়েদের বেঁচে থাকার, শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে যাবার সহায়ক একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের সাহায্য পেয়ে ভবিষ্যতে মেয়েরা এগোচ্ছে-

‘দিনের দিকে এগিয়ে যাবার এই ছবিটি অন্ধকার থেকে অন্ধকারে
জেগে আছে ফ্রেমে’

এমন একটি ছবির কথা কোনো কোনো ছাত্রী এখন কল্পনা করতেই পারে।

আরও পড়ুন1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারণ গুলি কী ছিল

Leave a Comment