‘শান্ত হলুদ দেবতারা’ এতদিন কী করেছিলেন? তাঁদের কীরূপ পরিণতি হয়েছিল? তাঁদের এই পরিণতি সমাজের কোন্ দিককে তুলে ধরে? |
দেবতাদের কার্যকলাপ
পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় শান্ত হলুদ দেবতারা এতদিন ধ্যানে ডুবেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাজার বছর ধরে অর্থাৎ সুপ্রাচীনকাল থেকে দেবতারা মন্দিরে স্থির, ধ্যানস্থ হয়েছিলেন। তারা স্বপ্ন দেখছিলেন। অসহায় মানুষের জন্য তারা কিছুই করেননি। মানুষের জীবনে তাদের প্রভাব থাকলেও তারা মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি।
পরিণতি
যখন যুদ্ধ দেখা দিল, ‘সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন’, তখন ধ্যানস্থ শান্ত হলুদ দেবতারা উলটে পড়লেন। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়লেন। ‘তাঁরা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’ মানুষের জীবনে তাঁদের আর কোনো প্রভাব রইল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের সহায় হওয়ার পরিবর্তে দেবতারা নিজেরাই যুদ্ধের শিকার হয়ে সম্পূর্ণ বিপর্যস্তহয়ে পড়লেন।
সামাজিক তাৎপর্য
শান্ত হলুদ দেবতাদের এই পরিণতি মানুষের দৈবনির্ভরতা এবং অসহায়তাকে প্রকাশ করে। দেবতা যে মানুষের কল্পনামাত্র তার যে কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই, এই বিপর্যয় সে কথাই প্রমাণ করে। এখানে ‘শান্ত হলুদ’ বিশেষণের মাধ্যমে দেবতাদের কবি বিদ্রুপই করেছেন। কবি ভারতচন্দ্র বলেছিলেন, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?’ যুদ্ধের গ্রাস থেকে দেবতারা মানুষকে রক্ষা করতে পারেন না, তারা নিজেরাই ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। তাদের ধ্যান ও শান্তির বাণী যুদ্ধের অশান্তিকে রোধ করতে পারে না। ধর্মগুরুরা নিজেদের দেবতার প্রতিনিধি মনে করে সনাতন ধর্মবিশ্বাসে আবদ্ধ থাকে। হেমন্তে খসে-পড়া গাছের হলুদ পাতার মতো তারা জীর্ণ পুরোনো। হাজার বছরের পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। মানুষকে ‘শান্তির ললিত বাণী’ শোনায়। ভ্রান্ত বিশ্বাস, রক্ষণশীলতা ত্যাগ করে এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হওয়ার সময় এসেছে। শান্ত হলুদ দেবতাদের করুণ পরিণতি সমাজের এই দিকটিকেই তুলে ধরে।