একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা 500+ শব্দে

একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা
একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

ভূমিকা

গাছই হল এই পৃথিবীর প্রাণগঙ্গার প্রথম ঢেউ। প্রকৃতির এই চিরন্তন সত্য মেনে নিয়ে কবি সেই কারণে সেই গাছ বা বৃক্ষের উদ্দেশে বলেছেন-

‘অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহবান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ’
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গাছগাছালির পরেই পৃথিবীতে জায়গা করে নেয় জীবকুল এবং গাছেদের সঙ্গে গড়ে ওঠে তাদের প্রয়োজনীয় প্রাণের সম্পর্ক। যে সম্পর্ক আজও অটুট, আজও একান্ত প্রয়োজনীয়।

প্রাণের প্রকৃতি

এই বিশ্বের স্রষ্টা অকৃপণ নন কখনোই। পৃথিবীকে তিনি সাজিয়েছেন বৈচিত্র্যময় করে। পাশাপাশি পরম স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাকে। কবির গলায় তাই আমরা ধ্বনিত হতে দেখি-

‘অবিরল মরুভূমি ঘিরে 
বিচিত্র বৃক্ষের শব্দে স্নিগ্ধ এক দেশ 
এ পৃথিবী’
-জীবনানন্দ দাশ

পৃথিবীর প্রতি কবির এই মুগ্ধতার পিছনে অন্যতম কারণ অবশ্য ফুলে-ফলে ভরা গাছপালা, যার মধ্যে সজীব একটি প্রাণ আছে, যা অক্সিজেন জুগিয়ে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে জীবকুলের প্রাণকে রক্ষা করে। সেই অর্থে একটি গাছ একটি প্রাণেরই সমান।

গাছ কীভাবে প্রাণের সরূপ হয়ে ওঠে

মানবসেবায়, জীবকুলের প্রাণধারণে গাছের ভূমিকা কেউই অস্বীকার করতে পারে না। গাছের সেই ভূমিকাগুলো হল-

(ক) জীবনধারণে ভূমিকা: অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করেই বেঁচে থাকে এই পৃথিবীর যে-কোনো জীবের প্রাণভোমরা। গাছ সেইসব জীবের সজীব বন্ধু হিসাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে বাঁচিয়ে রাখে জীবকুলকে।

(খ) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা আমাদের পরিবেশে বায়ুদূষণের পরিমাণ কম নয়। উপরন্তু দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজনস্তরে যে ছিদ্র দেখা দেয় এবং তার ফলে জীবকুলের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে, গাছ তার প্রতিরোধ করে, দূষণ কমায়, ওজনস্তরের ছিদ্র মেরামত করে, বৃষ্টি ডেকে আনে, বন্যাও প্রতিরোধ করে।

(গ) জনজীবনে গাছপালা গাছপালা জনজীবনে নিয়ে আসে পরিশুদ্ধ বায়ু। ফুল-ফল-পাতা গাছেরা তো দেয়ই, রোধ করে ভূমিক্ষয়ও। গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় আসবাব থেকে আরম্ভ করে গৃহকার্যে দরকারি জ্বালানি। গাছ থেকে পাওয়া যায় মানুষের জীবনদায়ী অনেক ওষুধও। সেদিক দিয়ে গাছ মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।
(ঘ) সভ্যতার বিকাশে গাছপালা বনের দাবানল আদিম মানুষকে আগুন আবিষ্কারে এগিয়ে দিয়েছিল। মানবসভ্যতার সূচনা ঘটেছিল সেই আগুন আবিষ্কারের ভেতর দিয়েই। গাছপালা ছিল সেই আগুনের ইন্ধন। তারপর সভ্যতা যত এগিয়েছে’ ততই গাছপালা তার সহায়ক হয়েছে। মাটির তলা থেকে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাও গাছেরই দান। এই কয়লা আজকের সভ্যতার বহু শক্তির উৎস।

বৃক্ষ নিধন

একটি সঙ্কট: দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বেই নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে মানুষের অস্তিত্বই আজকে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। চারিদিকে বেড়েছে বায়ুদূষণ, ভূমিদূষণ, অনাবৃষ্টি, মরুভূমির প্রসার, বন্যা প্রতিরোধে ব্যর্থতা। মানুষ তাই এখন নিজের কৃতকর্মের জন্যে বলতেই পারে ‘আ. পৃথিবী। এখনো আমার ঘুম ভাঙেনি।’ (-শঙ্খ ঘোষ)

শুভ চেতনার উদয়

পৃথিবীর বুকে গাছপালা ধ্বংসের মাঝে কোনো কোনো দেশে মানুষের মনে ক্রমশ শুভ চেতনার উদয় হচ্ছে। নতুন করে বৃক্ষরোপণ চলছে, অরণ্য ধ্বংসের প্রবণতা কমানো হচ্ছে। তবে ভারতবর্ষে সেই পদক্ষেপ এখনও যথেষ্ট নয়। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে- ‘According to expert opinion, the minimum area of forest for a tropical country like India should be about one-third of the total area: সুতরাং ভারতবর্ষে অরণ্যের পরিমাণ আরও বাড়াবার প্রয়োজন।

উপসংহার

সবশেষে বলা যায়, গাছের যেমন প্রাণ আছে, তেমনি মানুষের প্রাণ রক্ষায় গাছেরও বড়ো অবদান রয়েছে। সে দিক দিয়ে একটি গাছের বাঁচা মানে একটি তো বটেই, আরও অনেক প্রাণের বেঁচে যাওয়া।

Leave a Comment