একটি বটগাছের আত্মকথা রচনা 500+ শব্দে

একটি বটগাছের আত্মকথা রচনা

একটি বটগাছের আত্মকথা রচনা
একটি বটগাছের আত্মকথা রচনা
[রচনা-সংকেত: ভূমিকা- জন্মবৃত্তান্ত অতীতের কিছু অভিজ্ঞতা- বর্তমানের কিছু অভিজ্ঞতা – শেষ কথা (উপসংহার)]

ভূমিকা

হে পথিক, ক্লান্ত তুমি? ঘামে ঘামে ভিজে গিয়েছে সারা শরীর? হবে না-ই বা কেন? প্রদীপ্ত সূর্যের খরতাপে যেন পুড়ে যাচ্ছে আদিগন্ত চরাচর। মাটি পুড়ছে। ফসল পুড়ছে। ধুকুর হুকুর ঝুঁকছে গাছপালা। ধুকছে পশুপাখি, কীটপতঙ্গ এবং আরও কত কী। প্রবলতর নিদাঘ যে এখন। জ্যৈষ্ঠ মাস। তাও আবার ঝড়বৃষ্টি নেই বেশ কিছুদিন ধরে। শরীর ঘর্মক্লান্ত হওয়া অসম্ভব কিছু তো নয়। পথ চলতে চলতে যদি সত্যিই তুমি ক্লান্ত হয়ে থাকো তো মধুকবির ভাষায় বলব-

‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব রক্ষ্যে
তিষ্ঠ ক্ষণকাল…’

না, না, কোনো সমাধিস্থলে দাঁড়াতে বলছি না। ঠিক এই মুহূর্তে যে বিশাল বটগাছটার তলায় দাঁড়িয়ে তুমি ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে জল খাচ্ছ আর ভাবছ জল খেয়েই গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দেবে, সেই গাছটার নীচেই কিছু সময় থাকতে বলছি। দেখবে, ঠান্ডা হাওয়া দিয়ে তোমার ক্লান্ত শরীরটাকে ঠিক জুড়িয়ে দেব আমি। কী বলছ? আমি কে? ওহ্-হো, সেটা তো বলা-ই হয়নি, এই বিশাল বটগাছটা আমিই। তোমার মনে নিশ্চয় কৌতূহল জাগছে আমার সম্পর্কে? শুনবে আমার কথা?

জন্মবৃত্তান্ত

সে অনেককাল আগের কথা। তা ধরো দেড়শো বছরের বেশি তো হবেই। কীভাবে জন্মেছিলাম, তা জানি না। হয়তো কোনো পাখি বটফল খেয়ে এখানে ফেলে গিয়েছিল তার বীজ। বেশ কিছুদিন বীজ রূপে পড়ে ছিলাম মাটির আড়ালে। কিন্তু অঙ্কুরিত হবার সময়েই আমি ঠিক বুঝেছিলাম-

‘জড় নই মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ
আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’
-(আগামী: সুকান্ত ভট্টাচার্য)

তারপর হাজার ঝড়ঝঞ্জা সয়ে একটু একটু করে যতই মাথা তুলেছি নীল আকাশের দিকে, ততই বুঝেছি অনেককিছু। তবে যত না বুঝেছি, তার চেয়ে দেখেছি আরও বেশি। ইংরেজের অত্যাচার দেখেছি, বিপ্লবীর ফাঁসি দেখেছি। সাক্ষী হয়েছি বহু হাসি-কান্নারও।

অতীতের কিছু অভিজ্ঞতা

একবার কী হয়েছিল জানো? সালটা আমার ঠিক মনে নেই, তবে মনে আছে সেবারে খুব বন্যা হয়েছিল। এমন এক ভয়ানক বন্যা যে, ঘরবাড়ি সব ডুবে একাকার। মানুষ তখন আশ্রয়ের খোঁজে এদিকে-ওদিকে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। এগাছে-সেগাছে চড়ে বসে আছে যদি কেউ এসে উদ্ধার করে সেই আশায়। দিনের-পর-দিন খাদ্য না পেয়ে, পানীয় জল না পেয়ে মৃতপ্রায় অনেকেই। কিন্তু তবুও কোথায় সাহায্য? সেবার আমার বড়ো বড়ো ডালে আশ্রয় নিয়েছিল বেশ কিছু মানুষজন। কারও হয়তো ঘর ভেসে গিয়েছে বানের জলে, কারও বা ভেসে গিয়েছে সর্বস্ব, কেউ কেউ হয়তো হারিয়েছে মা-বাবা কিংবা ভাই-বোনকে।

এক তরুণ দম্পতির দেখা পেয়েছিলাম, যাদের দু-মাসের সন্তান হাত ফসকে ভেসে গিয়েছিল জলের তোড়ে। সন্তানের জন্যে সেই মায়ের বুকফাটা কান্না আজও যেন বুকের মধ্যে শুনতে পাই আমি। বউটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতার ব্রাহ্মণের মতো ভেসে যাওয়া ছেলেটাকে ফিরিয়ে আনবার ইচ্ছেতে সে আমার ডাল থেকেই ঝাঁপ দিয়েছিল বানের জলে। আর ফেরেনি। ভুলিনি গো, সেসব কথা ভুলিনি।

যেমন ভুলিনি আমারই ডালে এক বিপ্লবীকে ইংরেজরা ফাঁসি দিয়েছিল। ওফ, সে দৃশ্য তুমি যদি দেখতে। ফাঁসি দেওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগেও সেই বিপ্লবী ‘বন্দোমাতরম’ শ্লোগান দিচ্ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার দিন সেই বিপ্লবীর সম্মানে এখানে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। সেদিন আমিও যে কতটা খুশি হয়েছিলাম, ভাবতে পারবে না তুমি।

বর্তমানের কিছু অভিজ্ঞতা

বর্তমানের অভিজ্ঞাতাও কী কম? এই তো, দিনকয়েক আগেও টর্নেডোর কবলে পড়ে আমার মস্ত দুটো ডালই ভেঙে পড়ল কয়েকটা পাখির বাসাসহ। আহা রে, তাতে কিছু পাখির ছানাও মরেছে অসহায়ের মতো। পারিনি গো, চেষ্টা করেও আমি রক্ষা করতে পারিনি তাদের।

শেষ কথা

শুনলে তো আমার কথা? এভাবেই বেঁচেবর্তে আছি আমি। বহু বছর ধরে। জানি না আরও কতদিন এভাবে থেকে অনেককিছু দেখতে হবে। কিন্তু এটা এখন মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি- ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন’, এর মধ্যে কোনন্দিন হয়তো রাস্তা তৈরির নামে করাতের ঘায়ে সাঙ্গ হবে আমার জীবনযাত্রা। ততদিন তো অন্তত সবার সেবা করি, না কি বলো?

আরও পড়ুন1943 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারণ গুলি কী ছিল

Leave a Comment