শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা রচনা
|
ভূমিকা
সভ্য মানুষ যে-কোনো কালেই বাঁচার মতো বাঁচতে চায়, বাঁচতে চায় সবার মধ্যে বিশেষ হয়ে। জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে পূর্ণতায় ভরিয়ে তুলতে চায় নিজের মনটিকেও। মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষার কথা ভেবেই যেন খ্যাতনামা এক কবি বলেছেন-
কবি কথিত জীবনকে জীবন্ত করে তুলতে বড়ো অবদান রাখতে পারে শিক্ষা। তবে এই শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে- ‘Education is life long process’, সুতরাং সারাজীবন ধরেই এই শিক্ষার বিস্তার চলে। শিক্ষার এই বিস্তারে বড়ো ভূমিকা নিতে পারে গণমাধ্যমগুলো।
গণমাধ্যম কী
‘গণ’ কথাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জনসাধারণ। এই জনসাধারণ যেসব মাধ্যমের ভিতর দিয়ে তথ্যসংগ্রহ, আনন্দ লাভ, বিনোদন এবং বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে, সেসব মাধ্যমকেই বলা হয় গণমাধ্যম। পালাগান, কীর্তন, পুতুলনাচ, বিভিন্ন ধরনের নাচ, কবিগান ও অন্যান্য গান, থিয়েটার, সংবাদপত্র, রেডিয়ো, যাত্রা, দূরদর্শন, সিনেমা, গ্রন্থাগার, ইন্টারনেট ইত্যাদি হল সেই ধরনের গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমগুলো কীভাবে শিক্ষা বিস্তার করে
গণমাধ্যমগুলো প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ধরনের। স্বাভাবিকভাবে তাদের শিক্ষা বিস্তারের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন-
বিভিন্ন ধরনের গান : প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত নানা ধরনের গানের আসর গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমদিকের পালাগান, কীর্তন এবং কবিগানের ভিতর দিয়ে সাধারণ মানুষ ধর্মীয় ভাব, সামাজিক রীতিনীতি এবং শাস্ত্রজ্ঞানের শিক্ষা পেত। আধুনিককালেও যেসব গান হয়, তার মধ্যে কখনো কখনো সমাজ, রাজনীতি, স্বদেশচেতনা ইত্যাদির জ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
বিভিন্ন ধরনের নাচ : বিভিন্ন ধরনের নাচ, যেমন- পুতুলনাচ, কথক, কথাকলি, ছৌ, কুচিপুড়ি, সাঁওতালি নৃত্য প্রভৃতির ভিতর দিয়ে সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং শাস্ত্রজ্ঞানের প্রসার ঘটে।
থিয়েটার ও যাত্রামঞ্চ : থিয়েটারের সূচনা পর্ব থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত এবং গ্রাম অঞ্চলের যাত্রাপালায় নাট্যাভিনয়ের ভিতর দিয়ে সামাজিক মানুষের জীবনের নানান সমস্যা ছাড়াও নাট্যাভিনয়, নাচ-গান কিংবা সভ্য সংস্কৃতি কেমন হওয়া উচিত, সাধারণ মানুষ তার ধারণা পায়।
সংবাদপত্র এবং পত্রপত্রিকা : সংবাদপত্র এবং অন্যান্য পত্রপত্রিকা দেশ-বিদেশের নানান খবর, সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা, খেলাধুলা ও সাহিত্য সম্পর্কিত নানান তথ্য প্রদান এবং চর্চার ভিতর দিয়ে সাধারণ মানুষের ওই সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রসার ঘটায়। মানুষকে সমাজ, দেশ ও রাজনীতি সম্পর্কেও সচেতন করে তোলে।
রেডিয়ো বা এফ এম : অতীতের রেডিয়ো জনসাধারণের কৃষি, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি, রাজনীতি, শাস্ত্র, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান বাড়াত। বর্তমান যুগে রেডিয়োর বিবর্তনে সৃষ্ট এফ এম এখনও সেইসব কাজ করে থাকে।
দূরদর্শন : দূরদর্শন একটি অডিও-ভিশুয়াল গণমাধ্যম। নানান নাটক, সিরিয়াল, চলচ্চিত্র, খেলা, কৃষিকথা, বিজ্ঞানচর্চা, সংবাদ ইত্যাদি সম্প্রচারের ভিতর দিয়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের জ্ঞান বাড়িয়ে তোলে।
সিনেমা বা চলচ্চিত্র : দূরদর্শনের মতো সিনেমা বা চলচ্চিত্রও একটি অডিও-ভিশুয়াল মাধ্যম। এই মাধ্যম সাধারণ মানুষের জীবন-সমাজ-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-শিল্প-ভৌগোলিক-ঐতিহাসিক জ্ঞানের প্রসার ঘটায়, দেশ-বিদেশকে চিনতে সাহায্য করে। তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বিশেষ দেশ, কাল, ব্যক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের প্রসার ঘটে।
গ্রন্থাগার ও ইন্টারনেট : গ্রন্থাগার বা পাঠাগার দেশ-বিদেশ-শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান-ভূগোল-ইতিহাস-রাজনীতি-খেলা প্রভৃতি বিষয়ে বইয়ের জোগান দিয়ে জনসাধারণকে এইসব বিষয়ে জ্ঞানের প্রসার ঘটায়। অন্যদিকে কম্পিউটার ও মোবাইলের ইন্টারনেটও তথ্য জুগিয়ে, বিভিন্ন ছবি দিয়ে শিক্ষার প্রসার ঘটায়।
উপসংহার
সব গণমাধ্যমই যে সবসময় শিক্ষার প্রসার ঘটাবে, তা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট গণমাধ্যম কোনো বিশেষ শ্রেণির প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠলে তা ক্ষতিকর প্রভাবই ঘটায়। তা ছাড়া নাচ-গান-থিয়েটার-দূরদর্শন-সিনেমা ইত্যাদি গণমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার যথেষ্ট ক্ষতিকারক। অর্থাৎ ক্ষতিকারক নয়, এমন গণমাধ্যমই উপকার করে বেশি। এবং কিছু কিছু গণমাধ্যমের সীমিত ব্যবহারেই মানুষ উপকৃত হয়। ওইসব গণমাধ্যমের জন্যেই-