ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সম্পর্কে দুই ধর্মের দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা |
উৎপল : কী রে সেলিম, তোকে যে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা এসএমএস-টা পাঠালাম, তুই তো কোনো রেসপন্স করলি না।
সেলিম : এসএমএস করেছিলি? কই, পাইনি তো!
উৎপল : ওমা সে কি। এত সুন্দর করে ছবিটবি এঁকে, ছড়া লিখে পাঠালাম, তুই বলছিস পাসনি?
সেলিম: সত্যি সত্যি পাঠিয়েছিলিস তো? নাকি ঈদে নিমন্ত্রণ করেছিলাম, তুই যেতে পারিসনি বলে গুল দিচ্ছিস?
উৎপল : কী ভাবিস আমাকে? মিথ্যেবাদী? দ্যাখ, হাইফাই কেউ না হতে পারি, কিন্তু মনে রাখিস, উৎপল চক্রবর্তী বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোনো দিন কারও সঙ্গে তঞ্চকতা করেনি, করবেও না। ঈদে তোদের বাড়িতে যেতে পারিনি, সেটাও ইচ্ছে করে ভাবিস না। আমার বাবার শরীরটা সত্যিই খারাপ ছিল।
সেলিম : দূর বোকা, আমি কি সত্যিসত্যি বলছি নাকি? আমি তো ইয়ার্কি মারছি। নইলে আমি কি জানি না তুই বা তোরা কেমন ধরনের মানুষ? আর তোর এসএমএসটা পেয়েছি। কিন্তু ঈদে নমাজ পড়া, এটা-ওটা – কত কী কাজ থাকে বল দেখি? ওসব সারতে গিয়ে রিপ্লাই দিতে ভুলে গেছি। সরি।
উৎপল : আকাশ বা স্বদেশ ওরা কেউ গেছিল নাকি তোদের বাড়িতে?
সেলিম : সবাই কি তোর মতো রে? স্বদেশ আসেনি। একটা ফোনও পর্যন্ত করেনি। আর আকাশ ফোন করে জানিয়েছিল, ওর দাদু নাকি চান না তাঁর নাতি কোনো মুসলমান বাড়িতে ঈদের নিমন্ত্রণ খেতে যাক।
উৎপল : এরকম কথা বলেছে? ছি ছি। আকাশকে এ নিয়ে ঝাড়তে হবে তো।
সেলিম : না, না। এ নিয়ে ওকে আর কিছু বলতে যাস না। ওর আর দোষ কী বল? ১৯৪৭-এ দেশভাগের পরে এতগুলো বছর কেটে গেছে, তবু কি ভারতের বুক থেকে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা দূর হয়েছে? এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে আপন করে নিতে পেরেছে এখনও? শুধু আকাশের দাদু কেন, আমাদের ধর্মের অনেকেও কি আপন করে নিতে পেরেছে হিন্দুধর্মের মানুষদের? সময় পালটালেই সব পালটে যায় না রে উৎপল, তার জন্য সমাজ, সরকার, মানুষজন সার্বিক ক্ষেত্রে প্রচার ও সচেতনতা প্রয়োজন।