বিজ্ঞানের ভালোমন্দ রচনা/বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল রচনা
বিজ্ঞানের ভালোমন্দ রচনা/বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল রচনা |
ভূমিকা
আধুনিক মানবসভ্যতার প্রধান স্তম্ভ হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের অবদান ব্যতিরেকে আমাদের বর্তমান জীবন যেন গতিহীন, নিস্পন্দ। এই কারণেই বর্তমান যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। প্রত্যুষে ঘুম ভাঙা থেকে রাত্রিতে শয্যা গ্রহণ পর্যন্ত, মানব শিশুর জন্ম থেকে দেহান্তের পর দেহ সৎকার পর্যন্ত প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের কথা চিন্তা করলে বিস্মিত হতে হয়। আদিম যুগ থেকে প্রকৃতির অকৃপণ দান আর মানুষের জ্ঞান সাধনা ও কঠোর তপস্যার ফলে আমরা বিজ্ঞান আবিষ্কারের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে উপনীত হয়েছি।
বিজ্ঞানের সার্বিক ব্যবহার
মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা উপকরণ-টুথব্রাশ-পেস্ট, খাবারদাবার, যানবাহন থেকে শুরু করে মনোরঞ্জন, অবসর বিনোদনের উপাদানে বিজ্ঞানেরই অবদান। কৃষিক্ষেত্রে নানা সরঞ্জাম, উন্নত বীজ-সার-কীটনাশক ব্যবহার শস্য উৎপাদনের পরিমাণ বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার, ক্যালকুলেটরের মতো যন্ত্র আর ইনটারনেট ব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের পাঠ গ্রহণ অতি সহজসাধ্য করেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান মানুষকে সুস্থ শরীরে দীর্ঘজীবন লাভে সক্ষম করেছে। বিভিন্ন প্রতিষেধক আবিষ্কারের ফলে জলবসন্ত, টিবি, পোলিয়োর মতো রোগকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে মানুষ। নানারকম জটিল অস্ত্রোপচার মানুষকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন আজকের দিনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এসবই বিজ্ঞানের ভালো দিক।
বিজ্ঞানের মন্দ প্রভাব
বিজ্ঞানের কল্যাণময় রূপের সমস্ত সুবিধা ভোগ করেও আমরা ভুলতে পারি না হিরোসিমা-নাগাসাকির মর্মান্তিক স্মৃতি। অর্থাৎ, শুধু মানব কল্যাণেই নয় ধ্বংসের জন্যও বিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে। শুধু কী তাই! যন্ত্র সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চারিদিকের পরিবেশ আজ দূষিত। মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে বেড়ে চলেছে যানবাহন, কলকারখানা। ফলে প্রাকৃতিক নানা উপাদানের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষ ক্রমশ যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় নিজস্ব চিন্তাভাবনার পরিধি কমে গেছে। কম্পিউটার, রোবটের ব্যবহার মানুষকে শারীরিক পরিশ্রম বিমুখ করে তুলেছে। মোবাইল ইনটারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহারে সামাজিক বন্ধন ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়েছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে এবং সামাজিক দায়িত্ব ভুলে – যেতে বসেছে। মানবসভ্যতার পক্ষে এটা কম ক্ষতিকর নয়।
দোষী বিজ্ঞান নয়, দোষী ব্যবহারকারী
বিজ্ঞান তার অকৃপণ দানের ডালি নিয়ে হাজির মানুষের দরবারে। তার ভালো বা মন্দ প্রয়োগের দায় মানুষের, অপপ্রয়োগের দায়িত্ব বিজ্ঞানের নয়। বিধ্বংসী শক্তিসম্পন্ন ডিনামাইট ব্যবহার করে পাহাড় ভেঙে রাস্তা তৈরিকে কেউ মন্দ কাজ বলবে না, কিন্তু ওই ডিনামাইট মানুষ খুন করতে, ব্রিজ বা রেললাইনের ক্ষতিসাধনে ব্যবহৃত হলে তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।