বাংলা চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো
বাংলা চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো। |
পরিচালক তপন সিংহের আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠা
পাঁচের দশকে বাংলা সিনেমাকে যাঁরা দেশীয় গণ্ডি থেকে মুক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলেছিলেন ও বাংলা সিনেমার প্রতি মানুষকে শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য করেছিলেন সেই সত্যজিৎ, ঋত্বিক ও মৃণাল সেনদের সমসাময়িক আর একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় পরিচালক হলেন তপন সিংহ। নিউ থিয়েটার্সে বাণী দত্ত ও বিমল রায়ের সহকারী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। পরে প্রযুক্তির প্রতি তীব্র আগ্রহে তিনি লন্ডনের পাইনউড স্টুডিয়োতে শব্দকৌশলের তালিম নিতে যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে ১৯৫৪-তে তাঁর প্রথম ছায়াছবি ‘অঙ্কুশ’ মুক্তি পায়। যদিও ছবিটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয় এবং মাত্র ন-দিন চলে। এতে তাঁকে প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই ব্যর্থতার মুক্তি ঘটে ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। ৪ এই সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের অভিনয় ও তাঁর পরিচালনা বাঙালি দর্শককে আলোড়িত করে।
মৌলিকতা ও বৈশিষ্ট্য
তপন সিংহ বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন গল্প নিয়ে একের-পর-এক জনপ্রিয় ও বাণিজ্যসফল ছবি বানিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি বাঙালি জীবনের স্বপ্ন, অভিজ্ঞতা ও চাওয়া-পাওয়াকে চলচ্চিত্রের উপাদান করে তুলেছিলেন। তাই তাঁর সিনেমার চরিত্রগুলির সঙ্গে বাঙালির বাস্তব জীবনের নিবিড় সম্পর্ক। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত সিনেমাগুলি হল- ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘হাটে বাজারে’, ‘আপনজন’, ‘সাগিনা মাহাতো’, ‘হারমোনিয়াম’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ইত্যাদি।
স্বীকৃতি, সম্মান ও অবদান
বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষাতেই ছবি করতে তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে তপন সিংহ মোট ১৯টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর ‘কাবুলিওয়ালা’ ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। এ ছাড়া ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। সতীর্থ সত্যজিৎ এবং ঋত্বিকের সঙ্গে তাঁর প্রধান পার্থক্য চলচ্চিত্রের সুচারু ভাষ্য ও মার্জিত প্রযুক্তির সঙ্গে আপস না-করে, মূল ধারায় সর্বজনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়াস ও পথসন্ধান। তপন সিংহের মতো নিষ্ঠাবান ও সংবেদনশীল বাঙালি পরিচালকের সংখ্যা নিতান্তই সীমিত।
আরও পড়ুন – বাংলা ক্রিকেটের ধারায় সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর অবদান