বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও
বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
মরু অঞ্চলে মাঝে মাঝে যে সামান্য বৃষ্টি হয় তা মুশলধারে হয়ে থাকে। এর ফলে যে জলধারার সৃষ্টি হয় তা অত্যন্ত বেগবান ও ক্ষণস্থায়ী হয়। হঠাৎ সৃষ্ট এইরূপ জলপ্রবাহকে ফ্ল্যাশ ফ্লাড (Flash Flood) বলে। এই জলের সঙ্গে মরুভূমির সূক্ষ্ম পলি, বালি মিশে কর্দমপ্রবাহের (Mud Flow) সৃষ্টি হয়। এই জলধারা ও বায়ুর সম্মিলিত কার্যের ফলে মরু অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। যথা –

ওয়াদি (Wadi)

অর্থ: ‘ওয়াদি’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘শুষ্ক উপত্যকা’।

সংজ্ঞা:
মরু অঞ্চলের শুষ্ক নদীখাতগুলিকে ওয়াদি বলে।

উৎপত্তি:
মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির ফলে যে জলধারার সৃষ্টি হয় তা নদীখাতে পরিণত হয়। প্রবাহপথে জলের দ্রুত অধঃগমন ও অধিক পরিমাণে বাষ্পীভবনের কারণে নদীখাতটি শুকিয়ে যায় এবং ওয়াদি গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য:
(i) বছরের অধিকাংশ সময় এই নদীখাতগুলি শুষ্ক থাকে। (ii) নদীখাতগুলির দৈর্ঘ্য খুব বেশি হয় না।

উদাহরণ:
আরব মরুভূমির স্থানে স্থানে ওয়াদি দেখতে পাওয়া যায়।

পেডিমেন্ট (Pediment)

অর্থ: ভূবিজ্ঞানী গিলবার্ট (G K Gilbert) 1882 সালে প্রথম ‘পেডিমেন্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এর অর্থ ‘পাহাড়ের পাদদেশ’ (পেডি = পাদদেশ, মেন্ট = পাহাড়)।

সংজ্ঞা:
মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশের প্রস্তরময় ঈষৎ ঢালু, বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে পেডিমেন্ট বলে।

উৎপত্তি: বায়ু ও সাময়িক জলধারার মিলিত কার্যের ফলে মরুভূমির পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল ক্ষয়ীভূত হয়ে পেডিমেন্টের উৎপত্তি হয়।

বৈশিষ্ট্য: (i) পেডিমেন্ট ছোটো বড়ো প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর দ্বারা গঠিত হয়। (ii) এর গড় ঢাল 1° -7° পর্যন্ত হয়। (iii) এর আকৃতি অবতল প্রকৃতির। (iv) পেডিমেন্ট তিনপ্রকার। যথা– (a) বাজাদা দ্বারা আবৃত – আবৃত পেডিমেন্ট, (b) একাধিক পেডিমেন্ট মিলিত হয়ে সৃষ্ট – সংযুক্ত পেডিমেন্ট, (c) জলের কার্যের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচ্ছিন্ন- ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট।

উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অ্যাটলাস পর্বতের দক্ষিণ দিকের পাদদেশীয় অঞ্চলে পেডিমেন্ট দেখা যায়।

বাজাদা (Bajada)

অর্থ: Bajada স্পেনীয় শব্দ ‘Bahada’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ‘একাধিক পললপাখাযুক্ত সমভূমি’।

সংজ্ঞা: মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশীয় পলল সমভূমিকে বাজাদা বলে।

উৎপত্তি: বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি ক্ষয়িত পদার্থ বাহিত হয়ে পেডিমেন্টের পরবর্তী অংশে সঞ্চিত হলে বাজাদা গড়ে ওঠে। আবার অনেকের মতে পর্বতের পাদদেশে একাধিক পলল শঙ্কু পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বাজাদা গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য:
(i) বাজাদা মূলত সূক্ষ্ম পলি, বালি দ্বারা গঠিত হয়। (ii) এর গড় ঢাল 3° -4°। (iii) বাজাদা কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

উদাহরণ: সাহারা, কালাহারি, আরব ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমির পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্টের সঙ্গে বাজাদা দেখা যায়।

প্লায়া (Playa)

অর্থ: স্পেনীয় শব্দ ‘প্লায়া’-এর অর্থ ‘লবণাক্ত হ্রদ’।

সংজ্ঞা:
মরু অঞ্চলের লবণাক্ত হ্রদগুলিকে প্লায়া বলে। প্লায়াকে আফ্রিকায় শট্‌ট্স (Shotts) বলে।

উৎপত্তি:
মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট একাধিক জলধারা কোনো পর্বতবেষ্টিত অবনত ভূমিতে এসে সঞ্চিত হয়ে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি করে। জলের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ ধুয়ে এসে এই হ্রদে জমা হয় বলে এগুলি লবণাক্ত হয়।

বৈশিষ্ট্য: (i) বছরের অধিকাংশ সময় প্লায়া শুষ্ক থাকে। (ii) শুষ্ক অবস্থায় প্লায়ার উপরিভাগে লবণের আবরণ দেখা যায়। একে অ্যালকালি ফ্ল্যাট বলে। (iii) অতিরিক্ত লবণাক্ত প্লায়াগুলিকে স্যালিনা বলে। (iv) এই হ্রদের আয়তন কয়েক বর্গমিটার থেকে 10 বর্গকিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। (ⅳ) শুষ্ক লবণাক্ত প্লায়াতলে সূর্যালোক প্রতিফলিত হলে জলের মতো দেখায়। তৃয়ার্ত মরু পথিকদের কাছে এগুলিই হল মরুভূমির মরীচিকা।

উদাহরণ: ভারতের রাজস্থানের সম্বর হ্রদ, তারিম অববাহিকার লপনর হ্রদ প্রভৃতি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা মরুভূমির ‘লা-প্লায়া’ পৃথিবীর বৃহত্তম প্লায়া।

Leave a Comment