থর মরুভূমির সম্প্রসারণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে লেখো

থর মরুভূমির সম্প্রসারণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে লেখো
থর মরুভূমির সম্প্রসারণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে লেখো।
ভারতবর্ষে প্রায় 23.4 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থর মরুভূমির অবস্থান, যার বিস্তৃতি পশ্চিম রাজস্থান, উত্তর গুজরাট, দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার অংশবিশেষ জুড়ে।

থর মরুভূমির উৎপত্তির কারণ ও প্রসারণ

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের উপকূল অতিক্রম করার পর যখন রাজস্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন বায়ুতে জলীয় বাষ্প খুব একটা থাকে না।

গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে উয়, শুষ্ক জলীয় বাষ্পহীন বায়ু প্রবাহিত হয়। এই অঞ্চলের একমাত্র পর্বত আরাবল্লি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তেমনভাবে বাধাপ্রাপ্ত না হওয়ায় বৃষ্টিপাত হয় না। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সারাবছর ধরে 25 সেমি-এর কম হয়, উদ্ভিদ জন্মায় না। ফলে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

থর মরুভূমির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে উচ্চ গতির বায়ু, বালিয়াড়ির দ্রুত হারে স্থান পরিবর্তন, চরমভাবাপন্ন জলবায়ু, অতি অল্প বৃষ্টিপাত, অস্বাভাবিক সৌরবিকিরণ এবং অত্যধিক বাষ্পীভবন এগুলি উল্লেখযোগ্য।

প্রতিরোধ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই থর মরুভূমির সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য ভারত সরকারের উদ্যোগে অনেক প্রকল্পই অধিগৃহীত হয়েছে। এর প্রধান কারণ –

1951 সালে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, থর মরুভূমি প্রতি বছর প্রায় 1½ মাইল হারে বেড়ে চলেছে। এর ফলে Planning Commission, Government of India আরাবল্লির সবুজায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

সাম্প্রতিককালে Council for Scientific and Industrial Re- search (CSIR)-এর বিজ্ঞানীদের সংগৃহীত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে আগামী 100 বছরে থর মরুভূমির আয়তন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে। হিমালয়ের বরফগলা মিষ্টি জলকে থর মরুভূমির বিভিন্ন অংশে বণ্টনের উদ্দেশ্যে প্রায় 649 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চওড়া খাল নির্মাণ করা হয়, যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 524 ঘনমিটার আয়তনের জল বহনে সক্ষম। এই খালটি ‘ইন্দিরা গান্ধি’ খাল নামে পরিচিত। যদিও থর মরুভূমি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ফলনশীল অর্থাৎ, সামান্য বৃষ্টিপাতের ফলে এখানে প্রচুর ‘জেরোফাইট’ জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়, কিন্তু এদের বংশবৃদ্ধির হার অত্যন্ত ধীর গতির হওয়ায় এবং সন্নিহিত অঞ্চলের বায়োটিক চাপ (অতিরিক্ত পশুচারণ, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ এবং অতিরিক্ত ঘাসজাতীয় শস্য কাটা) বেশি হওয়ার কারণে তা সবুজায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে ভারত সরকারের উদ্যোগে পৃথিবীর অন্যান্য সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলের কিছু নির্বাচিত দ্রুত বংশবৃদ্ধিকারী উদ্ভিদ এবং ঘাস বপন করা হচ্ছে, পরিবর্তনশীল বালিয়াড়িগুলির স্থিতিকরণের জন্য।

Leave a Comment