বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও

বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও

বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

বায়ু মূলত অবঘর্ষ, ঘর্ষণ ও অবনমন– এই তিন প্রক্রিয়ায় শুষ্ক মরু অঞ্চলে ক্ষয়কার্য করে এবং নানা ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। ভূমিরূপগুলি হল–

বায়ুর অবনমন কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ–

অপসারণ সৃষ্ট গর্ত (Deflation Hollow)

মরু অঞ্চলে বায়ুর অবনমন বা অপসারণ কার্যের ফলে কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে হাজার হাজার টন বালি অপসারিত হয়। ফলে ওই স্থানে অসংখ্য ছোটো বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয়। এদের অপসারণ সৃষ্ট গর্ত বলে। ভূবিজ্ঞানী হ্যাক এই গর্তগুলিকে ‘ব্লো আউট’ নাম দেন। এই গর্তগুলিকে ভারতের রাজস্থানে ‘ধান্দ’, মঙ্গোলিয়াতে ‘প্যাংকিয়াং হলো’ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাফেলো হলো’ বলা হয়।

উদাহরণ: মিশরের কাতারা (প্রায় 440 ফুট গভীর) পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ সুষ্ট গর্ত (আয়তন 3200 বর্গকিমি)।

মরূদ্যান (Oasis)

মরু অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে কোনো স্থানের বালুকারাশি বায়ু দ্বারা অপসারিত হলে সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এইভাবে সৃষ্ট কোনো গর্তে ভৌমজলস্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়লে সেখানে উদ্ভিদ ও জনবসতি গড়ে ওঠে। মরুভূমির মাঝে এই নৈসর্গিক স্থানকে মরূদ্যান বলে।

উদাহরণ- 
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এরূপ একটি মরূদ্যানে অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির কুফরা, টুয়াট, বাহারিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য মরুদ্যান।

বায়ুর অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ-

গৌর (Gour)

মধু অঞ্চলে বায়ুর অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ব্যাঙের ছাতার মতো প্রশস্ত উপরিভাগ ও সর্ব নিম্নাংশযুক্ত পাথরের অবশিষ্টাংশকে গৌর বলে।

উৎপত্তি: ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত। মিটারের মধ্যে বায়ুতে অধিক পরিমাণে বালিকণা থাকে। তাই বায়ুর প্রবাহপথে থাকা বড়ো শিলাখণ্ডের ওপরের অংশের তুলনায় নীচের অংশ বেশি ক্ষয় হয় এবং গৌর সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যদি কোনো শিলাখণ্ডের নীচে কোমল শিলা ও ওপরে কঠিন শিলা থাকে তাহলে অসম ক্ষয়কার্যের ফলে গৌর গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য: (১) এগুলি দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো হয় বলে এদের Mushroom Rock-ও বলে। (ⅱ) এদের উপরের প্রশস্ত অংশ অমসুন এবং নীচের সরু অংশ মসৃণ হয়। (ⅲ) এরা মরুভূমির মাঝে অবশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

পরিলক্ষিত অঞ্চল : সাহারা, ঘর, ইরান প্রভৃতি মরুভূমিতে অধিক সংখ্যায় গৌর দেখা যায়।

ইয়ার্দাং (Yardang)

বায়ু দ্বারা ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ আল বা প্রাচীর ও খাঁজ বা খাতবিশিষ্ট যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তাকে ইয়াদাও বলে।

উৎপত্তি: মধু অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পর্যায়ক্রমে উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় হয়ে খাতে পরিণত হয় এবং কঠিন শিলা কম ক্ষয় হয়ে দীর্ঘ আল বা প্রাচীরের আকার নেয়। এই বিশেষ ধরনের ভূমিরূপকে বিজ্ঞানী ব্ল্যাকওয়েল্ডার ইয়াদাও নামকরণ করেন।

বৈশিষ্ট্য:
(১) এদের গড় উচ্চতা ৪ মিটার, প্রশ্ন 8-40 মিটার এবং বিস্তার 70-400 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। (৪) ইয়াদান্ডের মাথাগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছুঁচোলো হলে তাকে ‘নিডিল’ বলা হয়। (ii) ইয়াদাও গঠনের জন্য শিলাস্তরগুলিকে অবশ্যই ব্যয়ুপ্রবাহের সমান্তরালে বিন্যস্ত থাকা চাই। (iv) ইয়াদাতকে মোরগের ঝুঁটির ন্যায় দেখতে হয় বলে একে Cock’s comb Ridge বলে।

পরিলক্ষিত অঞ্চল:
চিলির আটাকামা ও সৌদি আরবের মরুভূমিতে ইয়াদাও বেশি দেখা যায়। সাহারা মরুভূমির তিবেস্তিতে সবচেয়ে বড়ো ইয়াদাও দেখা যায়।

জিউগেন (Zeugen)

বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট টেবিলের ন্যায় চ্যাপটা ও সমতল উপরিভাগ বিশিষ্ট ভূমিরূপকে জিউগেন বলে।

উৎপত্তি:
মবু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ক্রমান্বয়ে সমান্তরালে অবস্থান করলে যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা ওপরের কঠিন শিলায় দারণ বা ফাটলের সৃষ্টি হয়। এই দারণের মধ্য দিয়ে বায়ু নীচের কোমল শিলাস্তরকে ক্ষয় করে খাতের সৃষ্টি করে। কিন্তু কঠিন শিলা কম ক্ষয় হওয়ায় সমতল চূড়ারূপে অবস্থান করে। এইভাবে কঠিন শিলায় চওড়া ও কোমল শিলায় সরু যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তা জিউগেন নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য:
(i) এরা 3 – 30 মিটার পর্যন্ত উচ্চ হয়। (ii) এদের উপরিভাগ বা মস্তকদেশ চ্যাপটা ও সমতল হয়। (iii) এদের দেখতে ছোটো ছোটো ছাতার মতো।

পরিলক্ষিত অঞ্চল :
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনেরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে জিউগেন বেশি দেখা যায়।

ইনসেলবার্জ (Inselberg)

মরুভূমির সমতল অংশে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ পাহাড়গুলিকে ইনসেলবার্জ বলে।

উৎপত্তি: জার্মান শব্দ ‘Inselberg’-এর অর্থ ‘দ্বীপশৈল’। মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত উচ্চভূমিগুলি বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয় পেয়ে খাড়াই পার্শ্বদেশবিশিষ্ট, সমতল বা সামান্য গোলাকৃতি শিখরদেশযুক্ত উচ্চভূমিতে পরিণত হয়। বিস্তীর্ণ মরুভূমির মধ্যে দ্বীপের মতো জেগে থাকা এই উচ্চভূমিগুলিকে ভূ-বিজ্ঞানী পাসার্জ (Passarge) নাম দেন ইনসেলবার্জ।

বৈশিষ্ট্য : (i) এগুলি সাধারণত গ্রানাইট, নিস্ কিংবা কংগ্লোমারেট শিলায় গঠিত হয়। (ii) একসঙ্গে অবস্থিত বড়ো বড়ো ইনসেলবার্জকে কোপিস (Koppies) বলে। (iii) এগুলি সাধারণত 30-300 মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। (iv) ইনসেলবার্জ আরও ক্ষয় পেয়ে গোলাকার মাথাবিশিষ্ট ঢিবিতে পরিণত হলে একে ‘বর্নহার্ট’ (Bornhardt) বলে।

পরিলক্ষিত অঞ্চল: কালাহারি ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমিতে এটি বেশি দেখা যায়। এছাড়া ভারতের মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি প্রদেশেও ইনসেলবার্জ দেখতে পাওয়া যায়।

Related Keywords :
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ চিত্র সহ, বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্র সহ, বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা দাও, বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপ চিত্রসহ লেখ, বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ pdf, বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো

Leave a Comment