চিত্রসহ প্রধান তিনপ্রকার বদ্বীপের বর্ণনা দাও বা উৎপত্তি আলোচনা করো

চিত্রসহ প্রধান তিনপ্রকার বদ্বীপের বর্ণনা দাও বা উৎপত্তি আলোচনা করো
চিত্রসহ প্রধান তিনপ্রকার বদ্বীপের বর্ণনা দাও বা উৎপত্তি আলোচনা করো।
নদী তার মোহানায় পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চয় করে বিভিন্ন আকৃতির বদ্বীপ গড়ে তোলে। নিম্নে প্রধান তিনপ্রকার বদ্বীপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল-

ধনুকাকৃতি বদ্বীপ (Arcuate Delta)

সংজ্ঞা: যে বদ্বীপের সমুদ্রমুখী রেখা সমুদ্রের দিকে ধনুকের মতো বেঁকে যায়, তাকে ধনুকাকৃতি বদ্বীপ বলে। ইংরেজী ‘Arcuate’ শব্দটি লাতিন শব্দ ‘Arcus’ থেকে এসেছে যার অর্থ bow বা ধনুক।

উৎপত্তি: বদ্বীপ অংশে মূল নদীটি দুইপাশের শাখানদীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলে তার সঞ্চয় সমুদ্রের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। এইভাবে বৃত্তচাপ বা জিহ্বার বা ধনুকের আকৃতিবিশিষ্ট বদ্বীপ গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য:
(i) এই বদ্বীপ ভারী পদার্থ যেমন কাদার স্তর, নুড়ি, বালি দিয়ে তৈরি। (ii) এই ধরনের বদ্বীপ প্রতি বছর সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয় বলে এদের বর্ধনশীল (Propagated) বদ্বীপ বলে। (iii) সমুদ্র ও নদীর জলের ঘনত্ব সমান হলে এই বদ্বীপ গড়ে ওঠে।

উদাহরণ: নিলনদ, হোয়াংহো, পো, ইরাবতী, গঙ্গা, গোদাবরী, মহানদী, মেকং, রাইন, নাইজার প্রভৃতি নদীতে এই প্রকার বদ্বীপ দেখা যায়।

পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ (Bird-foot Delta)

সংজ্ঞা: পাখির পায়ের মতো আকৃতিবিশিষ্ট বদ্বীপকে পক্ষীপদ বদ্বীপ বলে।

উৎপত্তি: এক্ষেত্রে অধিক ঢালের কারণে, নদীর গতিবেগ বেশি হলে নদী তার শাখানদীর মাধ্যমে সূক্ষ্ম উপাদানসমূহ বহন করে সমুদ্রের বহুদূর অবধি নিয়ে যায় এবং সমুদ্রজলের ঘনত্বের তুলনায় নদীর জলের ঘনত্ব কম থাকায় নদী প্রবাহের দুদিকে পলি সঞ্চিত হয়ে পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য: (i) এই বদ্বীপ সূক্ষ্ম পলি, বালি দ্বারা গঠিত। (ii) মূল নদী অনেকগুলি শাখায় বিভক্ত হয়ে সমুদ্রের দিকে প্রসারিত হয়।

উদাহরণ:
মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ, কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ ।

তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ (Cuspate Delta)

সংজ্ঞা: সমুদ্রের দিকে করাতের দাঁতের ন্যায় তীক্ষ্ণ অগ্রভাগের মতো প্রসারিত বদ্বীপকে তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ বা কাসপেট বদ্বীপ বলে। লাতিন শব্দ কাসপেটের অর্থ ‘তীক্ষ্ণ’।

উৎপত্তি : 
পুরোদেশীয় দুটি স্পিট দু-দিক থেকে বাড়তে বাড়তে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে কিংবা যৌগিক স্পিটের উন্মুক্ত প্রান্ত পুনরায় উপকূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে স্পিট গঠন করে, তাকে বলা হয় কাসপেট স্পিট। এই কাসপেট স্পিট ধারাবাহিকভাবে সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত হয়ে ক্রমশ ত্রিকোনাকার আকৃতি ধারণ করে তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ সৃষ্টি করে। আবার অনেক সময় নদীর মোহানায় সঞ্চিত পদার্থসমূহ প্রবল সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে মধ্যভাগ থেকে দুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বদ্বীপ করাতের দাঁতের মতো তীক্ষ্ণ হয়।

বৈশিষ্ট্য: (i) নদীর তুলনায় সমুদ্রতরঙ্গের শক্তি বেশি হয়। (ii) মূল নদীর মোহানাটি সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়।

উদাহরণ: স্পেনের এব্রো ও ইটালির তাইবার, ভারতের সুবর্ণরেখা নদীতে এই বদ্বীপ দেখা যায়।

Leave a Comment