নদীর ক্ষয়কার্যের দ্বারা গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করো
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের দ্বারা গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা করো। |
নদীর উচ্চগতিতে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল-
গিরিখাত ও ক্যানিয়ন (Gorge and Canyon)
অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ ইংরেজি ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকাকে গিরিখাত বলে। এই নদী উপত্যকা যখন ইংরেজি গভীর ‘।’ আকৃতির মতো হয়, তখন তাকে ক্যানিয়ন বলে।
উৎপত্তি : নদীর পার্বত্যপ্রবাহে যদি কোনো শিলাস্তর অপেক্ষাকৃত কম কঠিন হয় এবং জলপ্রবাহ যদি খুব বেশি হয়, তাহলে নদী নিম্নক্ষয়ের সঙ্গো সঙ্গে পাশের দিকে ক্রমশ ক্ষয়সাধন করতে থাকে। এর ফলে নদী উপত্যকা খুব সংকীর্ণ ও গভীর আকার ধারণ করে এবং ‘V’ আকৃতির উপত্যকা বা গিরিখাতে পরিণত হয়। অপরদিকে, শুষ্ক অঞ্চলে নদীর কেবল নিম্নক্ষয়ের ফলে উপত্যকা গভীর হয় এবং ‘।’ আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়নে পরিণত হয়।
উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
জলপ্রপাত (Waterfall)
উৎপত্তি : (i) নদীর গতিপথে পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। এই খাড়া ঢালে জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে। (ii) এ ছাড়া চ্যুতির ফলে সৃষ্ট খাড়া ঢাল বরাবর জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে। (iii) পর্বত বা মালভূমি যেখানে সমভূমিতে মেশে সেখানে ঢালের তারতম্য দেখা যায়। এই অংশেও নদীতে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। (iv) ঝুলন্ত উপত্যকায় হিমবাহ গলে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে।
উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং ভারতের ধুয়াধর জলপ্রপাত।
মন্থকূপ (Pot Hole)
অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীখাতে সৃষ্ট ছোটো ছোটো প্রায় গোলাকার গর্তগুলিকে মন্ধকূপ বলে।
উৎপত্তি: পার্বত্য অঞ্চলে এবড়োখেবড়ো বা অসমান নদীপথে জল পাক খেতে খেতে এগোতে থাকে। এই জলের সঙ্গে বাহিত নুড়ি, পাথর, শিলাখণ্ডগুলিও পাক খেতে থাকে ও নদী তলদেশে আঘাত করে (অবঘর্ষ) প্রায় গোলাকার গর্তের সৃষ্টি করে, এগুলি মন্ত্রকূপ নামে পরিচিত।
উদাহরণ: জব্বলপুরের পূর্বদিকে গৌর নদীর তলদেশে অনেক মন্ত্রকূপ দেখা যায়।
প্রপাতকূপ (Plunge Pool)
জলপ্রপাতের পাদদেশে জলস্রোতের সঙ্গে পতিত শিলাখণ্ডের আঘাতে প্রায় গোলাকার গহ্বরের সৃষ্টি হয়, একে প্রপাতকূপ বলে।
উৎপত্তি: অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় জলপ্রপাতের পাদদেশে ক্ষয় ক্রমশ বাড়তে থাকে ও ম্যকূপগুলি আকার ও আয়তনে ক্রমশ বেড়ে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্তের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি করে ও প্রপাতকূপের সৃষ্টি করে। শুষ্ক ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস পেলে এগুলি দৃশ্যমান হয়।
উদাহরণ: সুবর্ণরেখা নদীর হুডু জলপ্রপাতে প্রপাতকূপ দেখা যায়।
আবদ্ধ শৈলশিরা (Interlocking Spur)
অনেক সময় পার্বত্য শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত রয়েছে বলে মনে হয়, একে আবদ্ধ শৈলশিরা বলে।
সৃষ্টি: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শৈলশিরা দ্বারা কোনো নদী বাধা পেলে নদীটি বাধা কাটিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হলে আবদ্ধ শৈলশিরা গঠিত হয়।
উদাহরণ: গঙ্গার উর্ধ্বগতিতে আবদ্ধ শৈলশিরা পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন – ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো