বইমেলা রচনা 400 শব্দে

বইমেলা রচনা

বইমেলা রচনা
বইমেলা রচনা
“বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে
বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে।”

ভূমিকা

মিলনের আনন্দনিকেতন হল মেলা। আর ‘জ্ঞান যেথা মুক্ত’ মিলনের সেই ক্ষেত্রই হল বইমেলা। বই-মানুষের নীরব বন্ধু। নিঃসঙ্গ অবসরের একান্ত সুহৃদ। অতীত সূত্রে বর্তমান, বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন, শুভবুদ্ধি জাগরণের চাবিকাঠি। বইয়ের সাহচর্য মানুষের অগ্রগতির অঙ্গীকার। দেশ ও জাতির প্রগতির মাপকাঠি বই। জীবনে পরম প্রার্থিত যে বৈচিত্র্যের স্বাদ, যে অমৃত-সুধারসের আস্বাদন বই, বৃহত্তর মুক্ত প্রান্তরে সেই আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশক্ষেত্রই হল বইমেলা।

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বইমেলা

আমাদের দেশে বইমেলার প্রচলন ঘটে কলকাতা শহরে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। বোম্বাইতে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রথম জাতীয় বইমেলার উদ্বোধন হয়। বুক ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানী দিল্লিতে সর্বপ্রথম বিশ্ব বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে। প্রতি দু-বছর ব্যবধানে এই মেলা আয়োজিত হয়।

আমাদের রাজ্যে বইমেলা

বাঙালির ‘চতুর্দশ পার্বণ’ হল বইমেলা। এ রাজ্যে তার ইতিহাস সন্ধান করলে দেখা যায়, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’-এর উদ্যোগে বিড়লা তারামণ্ডলের বিপরীত মাঠে ‘কলিকাতা পুস্তক মেলা’র আয়োজন করা হয়। এরপর ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পার্ক সার্কাস ময়দানে ‘বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতি’র উদ্যোগে প্রচলন হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থমেলা’-র। বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে হাওড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জেলা-শহরেও বইমেলার বিস্তার ঘটেছে।

বইমেলার উদ্দেশ্য

বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত অগ্রগতি যদিও কাগজ-কলম-বাঁধাই করা বইকে রূপান্তরিত করেছে ই-বুকে, তবুও সহৃদয় সাহিত্যরসিকের কাছে, বইয়ের পাতার ভাঁজ; চিরচেনা নতুন পাতার গন্ধ আজও তরতাজা। সেই স্মৃতি রোমন্থন ও মনের উদর-তৃপ্তির কেন্দ্র বইমেলা। নতুন নতুন জ্ঞানের সঞ্চার, নব নব কৌতূহল, নিত্য-নতুন অনুসন্ধানের পথ খুলে দেওয়াই বইমেলার মুখ্য উদ্দেশ্য। দেশের সঙ্গে জাতির, জাতির সঙ্গে বিশ্বমানবতার যোগসাধন করাই বইমেলার প্রধান ব্রত। দুষ্প্রাপ্য বইয়ের অন্যতম উৎস এই বইমেলা। দুর্মূল্য বই সুলভ মূল্যে সংগ্রহ করা যায় এই বইমেলায়। পুস্তক প্রচার, পুস্তক সংগ্রহের আগ্রহ বৃদ্ধি, শিশুর কল্পনালোককে উজ্জীবিত করাই বইমেলার প্রধান উদ্দেশ্য।

বইমেলার সার্থকতা

লেখক-পাঠক-প্রকাশকের ত্রিবেণী-সঙ্গম ঘটে বইমেলায়। সাহিত্যের ভুবন থেকে ইতিহাসে অতীত সন্ধান কিংবা বিজ্ঞান, বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, ভুগোল; পাশাপাশি রন্ধনশিল্প, সূচিশিল্প, কারুশিল্প, খেলাধুলা সকল বিষয়েই বহুবিচিত্র বইয়ের অভূতপূর্ব সমাবেশ ঘটে এই বইমেলায়। আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষাতেও সমৃদ্ধ হয় এই মেলাপ্রাঙ্গণ। এ ছাড়াও লিট্ল ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকাতেও ঋতুময় হয়ে ওঠে মিলনক্ষেত্রখানি।

উপসংহার

জ্ঞান-বৈভবের ঐশ্বর্যে মানবসভ্যতার বিজয়রথের যে অপ্রতিহত, অব্যাহত, তুরঙ্গম গতিসঞ্চার, বইমেলার মিলনপ্রাঙ্গণে তারই প্রতিধ্বনি নিনাদিত। বইমেলা জাতির সংস্কৃতির অন্যতম মুখ্য পরিচয়। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে বইমেলার সার্থকতালাভের অন্যতম প্রধান অন্তরায় অশিক্ষা, দারিদ্র্য, বিপন্ন আশ্রয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি শিক্ষাকে এ দেশের প্রতি ঘরে যতদিন না পৌঁছে দেওয়া যাবে, ততদিন বইমেলা এ দেশের সীমিত শিক্ষিত পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়ে যাবে। ফলে বইমেলার মুখ্য উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

Leave a Comment