বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা 500 শব্দে

বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা
বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা
“প্রকৃতিকে অতিক্রমণ কিছু দূর পর্যন্ত সয়, 
তারপরে বিনাশের পালা।” 
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা

বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ তার স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বার বার প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রকৃতিকে অবদমন করে মানুষ মেতে উঠেছে সভ্যতার উল্লাসে। কিন্তু যথোচিত সীমা অতিক্রম করা মানুষের এই ঔদ্ধত্য প্রকৃতি মেনে নেয়নি। তারই ভয়াবহ ফলস্বরূপ দেখা যায় বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহ প্রভাব। বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডলের ও ভূপৃষ্ঠের বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে ওঠা এবং তার ফলে বিশ্বব্যাপী তাপের বিকিরণ-সাম্যতায় পরিবর্তন, যা সারা বিশ্বের আবহাওয়াকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি আজ একটি আতঙ্কের বিষয়।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও বিশ্ব উষ্ণায়ন

শীতপ্রধান দেশে উদ্ভিদ প্রতিপালনের জন্য তৈরি কাচের ঘরকে ইংরেজিতে গ্রিনহাউস বলে। ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরবিকিরণ কাচের দেয়াল ভেদ করে সহজেই গ্রিনহাউসে প্রবেশ করে। কিন্তু গাছ ও মাটি থেকে নির্গত বৃহৎ তরঙ্গের তাপীয় বিকিরণ কাচের ছাদ ও দেয়ালের মধ্য দিয়ে বাইরে বেরোতে পারে না। এর ফলে গ্রিনহাউসের মধ্যে উষ্ণতা বজায় থাকে।

গাছপালাদের জৈবিক ক্রিয়া ও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। দিনের বেলা পৃথিবীতে ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরবিকিরণ থেকে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, রাতের বেলা সেই তাপ দীর্ঘ তরঙ্গের বিকিরণের মাধ্যমে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এভাবেই পৃথিবীতে উত্তাপের সমতা বজায় থাকে। কিন্তু মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ভোগ ও সভ্যতার উন্নয়নে ক্রমাগত তৈরি হওয়া কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো জ্বলনশীল যৌগ পদার্থগুলি বেড়ে যায়। এই সম্মিলিত গ্যাসগুলির প্রভাবেই পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, একেই গ্রিনহাউস এফেক্ট বলে।

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণ

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মাত্রাছাড়া পরিমাণ বৃদ্ধির পিছনে কয়েকটি প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও মানুষের অপরিণামদর্শিতা প্রধান দায়ী। প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, ওজোনস্তর ইত্যাদি। মানবসৃষ্ট কারণগুলির মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রচুর ব্যবহার, শিল্পায়ন তথা কলকারখানার সংখ্যাবৃদ্ধি, লাগাতার নগরায়ণ ও আধুনিক বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিভিন্ন সরঞ্জামের যথেচ্ছ উপভোগ, পরিবহণদূষণ, জৈব পদার্থের পচন, পারমাণবিক পরীক্ষা, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিকাজে অত্যধিক ফলনের জন্য অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং সর্বোপরি নির্বিচারে অরণ্যবিনাশ।

প্রকৃতিতে উষ্ণায়নের প্রভাব

পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি একইরকমভাবে বাড়তে থাকে তাহলে ২০৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শীতপ্রধান দেশের সমস্ত বরফ গলে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অতিবৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ, সুনামি, তুষারপাত, ঋতুপরিবর্তনে অসাম্য পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। যেখানে আমাদের কৃষিকাজ বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানের উপর নির্ভরশীল, সেখানে বিশ্ব উষ্ণায়ন কৃষিকাজের ক্ষতিসাধন করে গোটা বিশ্বকে খাদ্যসংকটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যদি ৩° সেন্টিগ্রেড বাড়ে, সেক্ষেত্রে কানাডা ও রাশিয়ার বৃহৎ গম উৎপাদক অঞ্চলগুলির গম উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মানবজীবনে উষ্ণায়নের প্রভাব

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে তাপমাত্রার হেরফের বা ঋতুপরিবর্তনের অসাম্য, তা স্বাস্থ্যহানির বড়ো কারণ। এর ফলে খাদ্য ও জলবাহিত রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাল এনকেফ্যালাইটিস প্রভৃতি রোগ বৃদ্ধি পাবে। তাপপ্রবাহ যেমন জীবনহানিকর হবে তেমনি তাপমাত্রার দ্রুত হেরফের মানুষের সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে গিয়ে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনও ঘটাবে। লুপ্ত হবে বহু কীটপতঙ্গ প্রাণী যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে।

প্রতিকারের উপায়

শিল্পায়ন ও অরণ্যধ্বংস বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ হলেও আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রাও এর জন্য দায়ী। এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটার থেকে নির্গত মিথেন, যানবাহন থেকে নির্গত CO, এই উষ্ণায়নের বড়ো কারণ। তাই সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আমাদের বিদ্যুৎশক্তির অপচয় কম করার দিকেও নজর দিতে হবে।

উপসংহার

উষ্ণায়নের ফলে যেমন মেরুপ্রদেশের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়িয়ে দিয়ে প্লাবিত করবে বিশ্বের বহু দেশ তেমনি এর ফলে পৃথিবীর ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণও কমে যাবে। সুতরাং বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষতি মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কিয়োটা প্রোটোকল’-এ CO, গ্যাস নিঃসারণ চুক্তি হলে উন্নত দেশগুলি তা মেনে নেয়নি। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে এ নিয়ে একটা বিরোধ রয়েছেই, যা আদতে ক্ষতি করছে সার্বিক মানবসমাজের। আশা করা যায়, আগামী দিনে মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে আমরা অনেক বেশি সচেতন হব।

Leave a Comment