গঙ্গা দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
|
ভূমিকা
কিন্তু আধুনিক সভ্যতার অমঙ্গলকারী প্রভাবে আজকের গঙ্গা কলুষিত, তার পবিত্র জলধারা আজ দূষিত, প্রাণঘাতী। মানুষের সীমাহীন লোভ ও অপরিণামদর্শিতাই এই সর্বনাশের মূল কারণ।
গঙ্গাদূষণের কারণ
একদিকে জনসংখ্যাবৃদ্ধি, অন্যদিকে সভ্যতার কুপ্রভাব গঙ্গার – পবিত্রতাকে ক্রমাগত কলুষ-কালিমালিপ্ত করে চলেছে। গঙ্গার দু-পাশে – গড়ে ওঠা ক্রমবর্ধমান নগর-বন্দর-জনপদ প্রতিনিয়ত দূষণের বিষ ছড়াচ্ছে। গঙ্গার জলদূষণের প্রধান কারণগুলি হল-(১) কলকারখানা ও পয়ঃপ্রণালী থেকে নির্গত দূষিত জল ও বর্জ্য পদার্থ, (২) পলি দ্বারা নদীর নাব্যতা হ্রাস, (৩) নদীর জলে গবাদিপশু স্নান করানো, (৪) নদীর উভয় তীরে শব দাহ করা, (৫) মানুষ ও পশুপাখির মৃতদেহ জলে ভাসানো, – (৬) কৃষিজমি থেকে আগত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারমিশ্রিত জল গঙ্গার জলে মিশে যাওয়া, (৭) নদীর বুকে অতিরিক্ত যানবাহনের চলাচল, (৮) তেলবাহী জাহাজ থেকে তেলের নিঃসরণ এবং (৯) নদীবক্ষে নিক্ষিপ্ত ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্যাকেট প্রভৃতি।
গঙ্গাদূষণের ফল
গঙ্গা বাঁচাও অভিযান
চিরকল্যাণময়ী মাতৃসমা গঙ্গা আজ অশ্রুপ্লাবিতা। যন্ত্রসভ্যতাপ্রসূত অশুভ শক্তি গঙ্গাকে আজ রাক্ষসী করে তুলতে বদ্ধপরিকর। আমাদের উচিত সে বিষয়ে সচেতন হয়ে নদীর কল্যাণীমূর্তি ফিরিয়ে দেওয়া। আর সেই কর্তব্যপালনের প্রধান অঙ্গ হল ‘গঙ্গা বাঁচাও অভিযান’। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার নাম ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’। এই পরিকল্পনা রূপায়িত করতে যেসব কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে সেগুলি হল-
- গঙ্গার জলের বিশুদ্ধতার মান বজায় রাখতে দূষণের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য প্রতিনিয়ত পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।
- কলকারখানার দূষিত জল ও বর্জ্য পদার্থ যাতে সরাসরি গঙ্গার জলে মিশতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া।
- বৈজ্ঞানিক উপায়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা।
- জনপদের অবাঞ্ছিত নোংরা-আবর্জনা যাতে গঙ্গার জলে না মেশে সেদিকে লক্ষ রাখা।
- নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হওয়া।
- পয়ঃপ্রণালী নিয়ন্ত্রণ ও সুলভ শৌচাগার নির্মাণ।
- স্নানের জন্য উপযুক্ত ঘাটনির্মাণ ও বৈদ্যুতিক চুল্লি গড়ে তোলা।
- নদীর জলে প্রতিমা নিরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলিকে জল থেকে তুলে নেওয়া।
- নদীর ভাঙন রোধ করার ব্যবস্থা করা।
- বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা।