শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা

শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা – আজকের পর্বে শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা নিয়ে আলোচনা করা হল।

    শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা

    শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা
    শিষ্টাচার ও ছাত্রসমাজ রচনা

    ভূমিকা

    “The Greatest ornament of an illustrious life is modesty and humility …”-নেপোলিয়ন। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ হল সামাজিক মানুষের এক দুর্লভ সম্পদ। অরণ্যচারী-গুহাবাসী হিংস্র, বর্বরকে মনুষ্যত্বে উন্নীত করেছে যে-সমস্ত মানবিক গুণাবলি-তার অন্যতম এই শিষ্টাচার। সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে শিষ্টতার গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের ছাত্রছাত্রীই যেহেতু ভবিষ্যতের দায়িত্ববান-কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক, তাই ছাত্রজীবনে অর্জিত গুণাবলি, সৌজন্য, শিষ্টাচারই নিয়ন্ত্রিত করে তার পরবর্তী জীবনকে-তাকে গড়ে তোলে একজন যথার্থ মানুষ হিসেবে। আর এক প্রকৃত মানবসত্তাই গড়ে তুলতে পারে একটি সুস্থ সমাজ।

    শিষ্টাচার কী?

    ‘শিষ্ট’ (শাস্+ত) শব্দের অর্থ ভদ্র, মার্জিত। ‘আচার’ (আ + √চর্ + অ) শব্দের অর্থ আচরণ, চালচলন, রীতিনীতি, প্রচলিত ব্যবহার। অর্থাৎ ‘শিষ্টাচার’ বলতে বোঝায় মার্জিত, ভদ্র ব্যবহার। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে উঁচু-নীচু, পরিচিত-অপরিচিত, আত্মীয়-অনাত্মীয় সবার সঙ্গে রুচিসম্মত ব্যবহারই হল শিষ্টাচার।

    ছাত্রজীবন ও শিষ্টাচার

    ‘An honest man is the noblest work of God.’-একজন মানুষের হৃদয়বৃত্তির প্রতিফলন পাওয়া যায় তার সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারে। ছাত্রজীবনের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলির বিকাশসাধন সৌজন্য ও শিষ্টাচারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। ছাত্রসমাজই জাতির মেরুদণ্ড। বীজের অন্তরে নিদ্রামগ্ন অঙ্কুর যেমন আগামী দিনে মহিরুহের জন্ম দেয়, তেমনি কোনো দেশের ছাত্রসমাজের আচরণভঙ্গি নির্ধারণ করে জাতির ভবিষ্যৎ। অন্যায় দেখলে বুখে দাঁড়াবে তারা, কিন্তু তার ভাষা হবে সংযত, শিষ্টাচারসম্মত। শিক্ষাবিদ মেকলের মতে, কর্ম সম্পাদনে বদান্যতার প্রকাশই মানুষকে সভ্য-নম্র-ভদ্র করে গড়ে তোলে। তার প্রাপ্য ও প্রাপ্ত ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে অপরের সঙ্গে ভাববিনিময়ে। এই ভালোবাসার বোধ, নিরপেক্ষ দৃষ্টি, স্বার্থত্যাগের মন্ত্রেই শিষ্টাচারের পরিচয় মেলে। তবে একজন মানবশিশুকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তুলতে পারে একজন আদর্শ মা-ই। মায়ের যথাযথ শিক্ষাই তাকে সমাজের একজন করে তোলে।

    বর্তমান সমাজ ও শিষ্টাচার

    আভরণ যদি দেহের শোভা হয়, তবে শিষ্টাচার আত্মার মাধুর্য। কিন্তু বস্তুবাদী সভ্যতায় আপন স্বার্থচরিতার্থতায় আজ দেশ জুড়ে উচ্ছৃঙ্খলতা আর ঔদ্ধত্যের অশিষ্ট আস্ফালন। দেশীয় রীতিনীতি এবং সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্কৃতা, হিংসায় আচ্ছন্ন আজ পৃথিবী। বিশ্বায়নের করাল গ্রাসে প্রতিযোগিতার ইঁদুর-দৌড়ে স্বজন-স্বদেশ ধ্বংসে উদ্যত সমাজ মারণযজ্ঞে শামিল।

    প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়

    যুগে যুগে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছে যে-সকল মহাপুরুষ, উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের নাম-তাঁদের শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধই তাঁদের ব্যক্তিত্বকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। তাই কলুষিত সমাজপাঠকে সংশোধিত করতে মনীষীদের জীবনীপাঠে ছাত্রসমাজকে শিষ্ট আচরণ অনুশীলন ও প্রচার করতে হবে। ঔদ্ধত্য, অহমিকা বিসর্জনে শ্রদ্ধাশীল, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান হয়ে উঠতে হবে। অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলি এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

    উপসংহার

    যখন সমাজে অশিষ্টের দাপাদাপি তখন ছাত্রসমাজই ভরসার স্থল হয়ে ওঠে। কারণ তারুণ্যের ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, প্রতিবাদে মুখর হওয়া। যে শিষ্টাচারের শিক্ষা ছাত্রছাত্রীরা অর্জন করে নানাভাবে নানা উৎস থেকে, তার অবমাননা তারা মুখ বুজে মেনে নেবে না, এটাই স্বাভাবিক, এটাই কাম্য। কিন্তু তাদের প্রতিবাদের ধরন, ভাষা-তাও যেন শিষ্টাচারের গণ্ডি লঙ্ঘন না করে, এ বিষয়ে তাদের সচেতন থাকা দরকার। তবেই গড়ে উঠবে এক সুস্থ, সুন্দর সমাজ।

    Leave a Comment