‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

'ভাত' গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো
‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের প্রধান চরিত্র সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা উৎসব নাইয়া (উচ্ছব)। তার উগ্র চাহনি, বুনো চেহারা, পরনের ছোটো লুঙ্গি বড়ো বাড়ির বড়ো বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মনেও শুরুতে সন্দেহ জাগায়।

প্রেতপুরুষ

হতভাগ্য উৎসব মাতলার জলোচ্ছ্বাসে তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, ভিটেমাটি, বেঁচে থাকার রসদ-সর কিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার টানে এবং দীর্ঘদিন অভুক্ত উৎসব ক্ষুধার তীব্র জ্বালায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে ক্রমে ‘প্রেত’ হয়ে যায়।

পরিশ্রমী ও কর্মঠ

বাদার বাসিন্দা উৎসব পরিশ্রমী। গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে শুধু খাবারের আশায় সে আড়াই মন কাঠ কাটে।

হতভাগ্য উৎসব

উৎসব ট্র্যাজিক চরিত্র। বন্যায় সর্বস্বান্ত হয় সে। এই আঘাত কাটিয়ে ক্ষুধার তাড়না যখন অনুভব করেছে উৎসব, তখন সরকারি লঙ্গরখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে ভাতের আশায় বড়ো বাড়িতে এলে, ভাতের বিচিত্র আয়োজন দেখে হতবাক হয়। সেখানে অফুরন্ত খাবারের আয়োজন থাকলেও, নিরন্ন মানুষকে একমুঠো ভাত দেওয়ার হুকুম নেই। শেষে ঘটনাচক্রে তার ভাতের খিদে মিটলেও চুরির অপরাধে হতভাগ্য উৎসব অত্যাচারিত হয়।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

উৎসব সরল, মনিবের ধান খড় হয়ে যেতে দেখে সে কেঁদে ফ্যালে। আবার বুড়ো কর্তার দীর্ঘায়ুর জন্য আড়ম্বরে যজ্ঞ করা সত্ত্বেও তিনি নাও বাঁচতে পারেন, এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সে। বুড়ো কর্তার মৃত্যুর পর অশৌচের ভাত নিয়ে পালিয়ে গিয়ে গোগ্রাসে ভাত খাওয়ার সময়ও সে মৃত পরিজনদের ভুলতে পারেনি। কঠিন জীবনসংগ্রামে উৎসব সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment