‘ভোর’ শব্দটি ‘শিকার’ কবিতায় কোন্ কোন্ ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো। |
জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘শিকার’ কবিতায় ‘ভোর’ শব্দটি দুটি বিশেষ ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছে।
কবিতার প্রথম স্তবকে ‘ভোর’ শব্দটি কবিতার মূল বিষয়ের প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভোরের অমলিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রাত্রির অন্ধকারের বুক চিরে সকালের আলো প্রকাশিত হয়। সেইসময় আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল। পেয়ারা আর নোনা গাছের সবুজ রং টিয়ার পালকের মতো সজীব। চারদিকের বন ও আকাশ সকালের আলোয় স্নিগ্ধ শিশিরে ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে। তখনও আকাশে একটি তারা বাসরঘরের সবচেয়ে গোধূলিমদির মেয়েটির মতো জেগে আছে।
কবিতার দ্বিতীয় পর্যায়ে, তৃতীয় স্তবকে ‘ভোর’ শব্দটি সম্পূর্ণ বিপরীত আবহ তৈরি করে। প্রথম পর্যায়ের ভোরের সেই সজীবতা ম্লান হয়ে যায় এই পর্যায়ে। সারারাত চিতাবাঘিনির থেকে আত্মরক্ষা করে একটি হরিণ তার ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে নদীর তীক্ষ্ণ, শীতল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দেয়। হরিণীর পর হরিণীকে মুগ্ধ করে দিতে সে নিজস্ব দৃপ্ততায় যখন জেগে ওঠে তখনই শিকারির বন্দুকের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তার রক্তের রঙে নদীর জল মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল হয়ে যায়। এভাবেই নাগরিক জীবনের লালসায় অরণ্যপ্রকৃতির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় পর্বে করুণ হয়ে ওঠে।