মার্কসীয় তত্ত্বের ধারণায় সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত লেনিনের ভাবধারা আলোচনা করো

মার্কসীয় তত্ত্বের ধারণায় সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত লেনিনের ভাবধারা আলোচনা করো
মার্কসীয় তত্ত্বের ধারণায় সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত লেনিনের ভাবধারা আলোচনা করো।
কার্ল মার্কস ছিলেন আধুনিক সমাজতন্ত্রবাদের জনক। তাঁর নীতি অনুসরণ করে রুশ চিন্তাবিদ লেনিন সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই বিষয়ে লেনিনের বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম হল- সাম্রাজ্যবাদ: পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পর্যায় (Imperialism: the Highest Stage of Capitalism) |

সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কিত ভাবধারা

লেনিনের মতে, পুঁজিবাদ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয় তখন তা সাম্রাজ্যবাদে পরিণতি পায়।

পুঁজির কেন্দ্রীভবন:
তাঁর মতে, পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজির কেন্দ্রীভবন ঘটবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছোটো শিল্পগুলি বড়ো শিল্পের কাছে হেরে গিয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে বড়ো শিল্প আরও বড়ো হয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। এইভাবে একচেটিয়া পুঁজিবাদ মহাজনি মূলধনের জন্ম দেবে। এই মহাজনি মূলধন ব্যবহারের প্রয়োজনেই পুঁজিপতিরা সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি করে।

পুঁজির আন্তর্জাতিকীকরণ: লেনিনের মতে, সাম্রাজ্যবাদ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ। এই পর্বে পুঁজির রফতানি গুরুত্ব পায়। বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বিশ্ববাজারকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।

সাম্রাজ্যবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদ: একচেটিয়া পুঁজিবাদের সাম্রাজ্যবাদে উত্তরণের প্রমাণ হিসেবে লেনিন কয়েকটি লক্ষণের কথা বলেছেন। সেগুলি হল-‘

  • এই পর্যায়ে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের দ্বারা আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তারাই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভ করে।
  • এই পর্যায়ে শিল্প পুঁজি ও ব্যাংক পুঁজির মিলন ঘটে।
  • এই পর্যায়ে শিল্প পুঁজির মুনাফা বেড়ে যায়। এই উদ্বৃত্ত মুনাফাকে পুঁজি হিসেবে সস্তা কাঁচামাল ও সস্তা মজুরির দেশে রফতানি করা হয়।
  • এই পর্যায়ে পুঁজি রফতানি, বাজার দখল, মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পুঁজিপতিদের মধ্যে আঁতাত হয়। কিন্তু মুনাফার লোভে এই আঁতাত স্বল্পস্থায়ী হওয়ায় যুদ্ধ বাধে।

সাম্রাজ্যবাদ ও ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদ: লেনিন মনে করেন, সাম্রাজ্যবাদ যেমন একদিকে পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পর্যায় তেমনি অন্যদিকে অবক্ষয়েরও একটি অন্যতম পর্যায়। মুনাফা লাভকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে দ্বন্দু বাধে। এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফলে সাম্রাজ্যবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে।

Leave a Comment