সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে উপনিবেশবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সংক্ষেপে আলোচনা করো

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে উপনিবেশবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সংক্ষেপে আলোচনা করো
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে উপনিবেশবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

নতুন বিশ্ব

আমেরিগো ভেসপুচি কলম্বাস আবিষ্কৃত মহাদেশটিকে Mundus Novus বা New World (নতুন বিশ্ব) বলে অভিহিত করেন।

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে উপনিবেশবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি

পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে সমুদ্র অভিযান ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পোর্তুগাল ও স্পেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও সপ্তদশ শতক থেকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এ ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হয় এবং ক্রমশ পোর্তুগাল ও স্পেনকে পিছনে ফেলে দেয়।

নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক অগ্রগতি: আমেরিকায় উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলির তুলনায় ইংল্যান্ড কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পরে অতি দ্রুতগতিতে সে তার জায়গা করে নিয়েছিল। সেবাস্টিয়ান ক্যাবট ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে আটল্যান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছোন। এরপর উত্তর ক্যারোলিনায় পৌঁছোন ওয়াল্টার র‍্যালে। ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস টাউনে ইংল্যান্ড প্রথম তার উপনিবেশ স্থাপন করে। এরপর একে একে নিউ হ্যাম্পশায়ার, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, কানেটিকাট ইত্যাদি বিভিন্ন অঞ্চল দখল করতে থাকে। এইভাবে ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দে জর্জিয়া দখলের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ইংল্যান্ডের ত্রয়োদশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ হয়।

ইংরেজ নাবিক মার্টিন ফ্রোবিশার প্রথম কানাডার বেফিন দ্বীপে পৌঁছোন। এরপর ইংরেজরা কানাডা অধিকার করে এবং উপনিবেশ গড়ে তোলে। তবে কানাডা সহজে ইংল্যান্ডের দ্বারা অধিকৃত হয়নি। উপনিবেশ স্থাপনের জন্য ইংরেজদের কানাডায় অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে বহু যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে কুইবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। ইংরেজরা বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে শেষপর্যন্ত কানাডায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।

বিভিন্ন বণিক কোম্পানি, পিউরিটান গোষ্ঠী, তীর্থযাত্রী, রোমান ক্যাথলিক এবং মুক্ত মননশীল মানুষদের প্রচেষ্টায় এই সকল উপনিবেশগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সকল উপনিবেশগুলিতে ইংল্যান্ড কঠোর ঔপনিবেশিক নীতি আরোপ করে।

নতুন বিশ্বে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অগ্রগতি: আমেরিকায় পোর্তুগিজদের বাণিজ্যিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ফরাসিরাও আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগী হয়। ষোড়শ শতকে ফরাসিরাজ প্রথম ফ্রান্সিস-এর উদ্যোগে জ্যাক কার্টিয়ার নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এবং সেন্ট লরেন্স উপত্যকায় অভিযান চালান। ক্রমশ উত্তর আমেরিকার কানাডার কুইবেক এবং মন্ট্রিয়াল অঞ্চলে ফরাসি ঘাঁটি স্থাপিত হয়। নিউ অর্লিয়েন্স দখল করে সেখানেও উপনিবেশ গড়ে ওঠে। কানাডা-কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ফরাসি উপনিবেশ New France নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফ্রান্সের সম্পদের অন্যতম উৎসই ছিল উপনিবেশ থেকে লুণ্ঠন করা ফার। নতুন বিশ্বে ফ্রান্স সম্পদ লুণ্ঠন, শোষণের পাশাপাশি উপনিবেশগুলির অধিবাসীদের উপরও চালাতে শুরু করেছিল অকথ্য অত্যাচার।

Leave a Comment