ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের প্রভাব কী ছিল
ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের প্রভাব আলোচনা করো। |
ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের প্রভাব
ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথ প্রবর্তনের সুফল ও কুফল লক্ষণীয়।
ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের সুফল
(ক) আমদানি ও রফতানি বৃদ্ধি
ইংল্যান্ডের কারখানায় উৎপাদিত শিল্পপণ্য, কাপড়, সুতো প্রভৃতি ভারতের বন্দরগুলি থেকে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে আসে। ভারতে আমদানির পরিমাণ ১৮৬২-১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩ গুণ।
(খ) শিল্প স্থাপন
রেলের মতো আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার সাহায্যে লৌহ-ইস্পাত, কয়লা প্রভৃতি আধুনিক শিল্পের বিকাশ সম্ভবপর হয়। ব্রিটিশ পুঁজিপতিরা ভারতে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়।
(গ) আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্যের অনুপ্রবেশ
রেলপথের সম্প্রসারণের ফলে একদিকে যেমন ব্রিটিশ পণ্য ভারতের বাজারে অবাধে দ্রুত প্রবেশ করার সুযোগ পায়, তেমনি অন্যদিকে ভারতীয় কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী ও কুটিরশিল্পজাত দ্রব্যাদি আন্তর্জাতিক বাজারে অনুপ্রবেশের সুযোগ লাভ করে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার দখলের তাগিদে ভারতীয় পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের কুফল
(ক) কুটিরশিল্পের অবক্ষয়
ইংল্যান্ডের কলকারখানায় প্রস্তুত সস্তা চটকদার কাপড় ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রেল পরিবহণের মাধ্যমে ভারতের বাজার দখল করে নেয়। এইসব পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে দেশীয় পণ্য স্বাভাবিকভাবেই পাল্লা দিতে পারে না। ফলে ভারতের কুটিরশিল্প তথা দেশীয় বাণিজ্য ভীষণভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
(খ) দেশীয় সম্পদের অপচয়
প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও পরে ব্রিটিশ সরকার ভারতে রেলনির্মাণের কাজে ইংল্যান্ডের বেসরকারি সংস্থাগুলিকে গ্যারান্টি প্রথা-র মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগান দেয় তা দেশীয় সম্পদের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
(গ) ভারতীয় সম্পদের ক্রমনিষ্ক্রমণ
রেলপথের মাধ্যমে ভারতের বন্দরগুলি সুগম হয়ে ওঠে। ফলে ইংল্যান্ডের বণিকদের স্বার্থে ভারত থেকে কাঁচামালের বহির্গমন ত্বরান্বিত হয়।
ড. বিপানচন্দ্র বলেছেন যে, রেলপথ নির্মাণ ভারতীয় জনজীবন, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করেছিল।