ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রবর্তিত রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় কী প্রভাব ফেলেছিল? |
ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের প্রভাব
১৮২০ খ্রিস্টাব্দে স্যার টমাস মনরো ও ক্যাপটেন আলেকজান্ডার রিড দক্ষিণ ভারতে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায় সরকার ৩০-৪০ বছরের মেয়াদের ভিত্তিতে সরাসরি কৃষক বা রায়তদের সঙ্গে জমির বন্দোবস্ত করত। ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় এই ব্যবস্থার সুপ্রভাব ও কুপ্রভাব – দুটোই লক্ষ করা যায়-
সুপ্রভাব:
সুপ্রভাব:
- কৃষক ও সরকারের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ফলে প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পায়।
- এই বন্দোবস্তে কৃষক উচ্ছেদ হ্রাস পায়। ফলে কৃষকরা জীবিকার জন্য কৃষিকাজের উপর নির্ভর করতে পারত।
- রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের সময় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটেছিল। কারণ ভূমিদাস রাখার ক্ষমতা কৃষকদের ছিল না।
কুপ্রভাব:
- মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি উপস্থিত না থাকায় সরকারি কর্মচারীদের শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হত কৃষকরা।
- জমির ভাড়াটে হিসেবে কৃষক-প্রজাদের হাত থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করত।
- খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলহানি ঘটলেও খাজনা দিতে হত কৃষকদের।
- সরকারের চড়া হারে রাজস্ব মেটাতে গিয়ে অবশেষে সাউকার- মহাজনদের কাছ থেকে অধিক সুদে ঋণগ্রহণ করতে বাধ্য হত কৃষকরা। ফলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ত।
রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের এসকল কুফলের কারণে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয় দাক্ষিণাত্য কৃষক বিদ্রোহ। যার পরিণামে সরকার দাক্ষিণাত্য কৃষিত্রাণ আইন পাস করে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে।
ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় মহলওয়ারি বন্দোবস্তের প্রভাব
ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় হোল্ট ম্যাকেঞ্জি উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি অঞ্চল ও মধ্যপ্রদেশে মহলভিত্তিক যে ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন, তাকে বলা হয় মহলওয়ারি বন্দোবস্ত। মহলওয়ারি ব্যবস্থার প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হল-
সুপ্রভাব: মহলওয়ারি ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি ছিল না। মেয়াদি হলেও জমি লাভ করে কৃষকরা কুটির শিল্পের উন্নতিতে সচেষ্ট হয়। কোনো কৃষক রাজস্ব দিতে না পারলে গ্রামপ্রধান বা গ্রামসমাজ তাকে যৌথভাবে সাহায্য করত। পাশাপাশি কৃষকরা নায়েব এবং গোমস্তাদের শোষণ ও অত্যাচার থেকেও মুক্ত হয়।
কুপ্রভাব: মহলওয়ারি বন্দোবস্তের ত্রুটিগুলি হল-
- এই ব্যবস্থায় কৃষকের কোনোরকম জমির মালিকানা ছিল না। ফলে জমি থেকে কৃষকের উৎখাত হওয়ার আশঙ্কা থাকত।
- সরকারের অত্যধিক রাজস্বের চাহিদা মেটাতে গিয়ে স্বাভাবিক ‘জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হত কৃষক পরিবারগুলির।
- মধ্যস্বত্বভোগীদের উপস্থিতি না থাকার ফলে সরকারি কর্মচারী ও গ্রামপ্রধানের অত্যাচার ও শোষণের শিকার হত কৃষকরা। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব এবং রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা অবলম্বনের ফলে রাজস্ব মেটাতে ব্যর্থ কৃষকেরা চাষের জমি হারিয়ে জীবিকাহীন হয়ে পড়ত।