পিটস ইন্ডিয়া আইন সম্পর্কে পর্যালোচনা করো। ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।

পিটস ইন্ডিয়া আইন সম্পর্কে পর্যালোচনা করো। ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো
পিটস ইন্ডিয়া আইন সম্পর্কে পর্যালোচনা করো। ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।

পিটস ইন্ডিয়া আইনের পর্যালোচনা

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইলিয়ম পিট রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে ভারত শাসন আইন (India Act, 1784) পাস করেন। এটি পিটের ভারত শাসন আইন বা পিটস ইন্ডিয়া অ্যাক্ট নামে পরিচিত।

ধারা:
পিটের ভারত শাসন আইনের গঠনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ধারাগুলি নিম্নরূপ-

গঠনতান্ত্রিক ধারাসমূহ: 

  1. লন্ডনে বোর্ড অফ কন্ট্রোল নামে ৬ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি সভা গঠিত হবে।
  2. কোম্পানির অংশীদারদের ভোটে নির্বাচিত ২৪ জন ডাইরেক্টর নিয়ে ডাইরেক্টর সভা গঠিত হবে। প্রতি বছর এই সভার সদস্যদের ১/৪ অংশ পদত্যাগ করবেন এবং নতুন সদস্য নির্বাচিত হবেন।
  3. ৩ জন ডাইরেক্টরকে নিয়ে একটি সিক্রেট কমিটি গঠিত হবে। 

প্রশাসনিক শর্তাবলি:

  1. ভারতীয় প্রশাসনের আঞ্চলিক পরিষদ বা কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৪ জনের বদলে ৩ জন করা হয়।
  2. বাংলার গভর্নর জেনারেল সমগ্র ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসক হয়ে ওঠেন।
  3. রাজ্যজয় ও সাম্রাজ্যবিস্তারকে ইংল্যান্ডের জাতীয় মর্যাদা ও নীতির -বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়।

গুরুত্ব : এই আইন দ্বারা গঠিত বোর্ড অফ কন্ট্রোল ডাইরেক্টর সভাকে নিয়ন্ত্রণ করলেও বোর্ডের স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনো ক্ষমতা ছিল না। কোম্পানির দ্বারা ভারতের প্রশাসনিক কার্যাবলি ও দায়িত্ব নির্বাহের সুবাদে ভারতে এক ধরনের দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এইসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই আইনের গুরুত্বগুলি হল-

  1. পিটের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতে প্রশাসনিক ব্যবস্থার যে কাঠামো তৈরি হয়েছিল তা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিল।
  2. এই আইন ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সরকার, কোম্পানি এবং কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ভারতীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়সাধন ও এক্তিয়ার নির্ধারণ করে।
  3. ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও বোর্ড অফ কন্ট্রোলের যৌথ নিয়ন্ত্রণ কোম্পানিকে ভারতীয় প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করে।

ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর বিকাশ

ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর বিকাশের বিভিন্ন দিকগুলি হল-

আমলাতন্ত্র: ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আগত সিভিলিয়ানদের প্রশিক্ষণের জন্য গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ। এ ছাড়া ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতীয়রা উচ্চপদে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

সেনাবাহিনী:
ভারতে কোম্পানির স্থায়ী সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৮২০-র দশক থেকে এই সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের সুযোগসুবিধা হ্রাস করা হলে তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

পুলিশি ব্যবস্থা : ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রের মতে, ব্রিটিশ রাজত্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থার তৃতীয় স্তম্ভ ছিল পুলিশ।

  1. বাংলার প্রথম গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার জমিদারদের ‘থানাদারি পুলিশবাহিনী’-র পরিবর্তে কোম্পানির নিজস্ব পুলিশবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
  2. ওয়ারেন হেস্টিংসের উত্তরসূরী লর্ড কর্নওয়ালিস-ই প্রথম একটি সংঘবদ্ধ পুলিশি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংল্যান্ডের অনুকরণে প্রথম পুলিশ বিভাগ প্রবর্তন করেন।

Leave a Comment