১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলি উল্লেখ করো। এই আইনের মূল্যায়ন করো |
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের বিভিন্ন শর্তাবলি উল্লেখ করো। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের মূল্যায়ন করো। |
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ-এর আমলে ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজকর্মের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করে। এই আইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আইন, ১৭৭৩ নামেও পরিচিত।
রেগুলেটিং অ্যাক্টের শর্তাবলি
রেগুলেটিং আইনের দুটি দিক ছিল- কোম্পানির ইংল্যান্ডে অবস্থিত পরিচালক সভা সম্পর্কিত এবং ① কোম্পানির ভারতীয় প্রশাসন বিষয়ক।
পরিচালক সভা: এই আইনবলে-
- কোম্পানির ইংল্যান্ডে অবস্থিত পরিচালক সভা কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস নামে পরিচিত হয়।
- সভার সদস্যসংখ্যা ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২৪ জন হয়।
- সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হয় ৪ বছর।
- স্থির হয়, প্রতি বছর ১/৪ অংশ পদত্যাগ করবেন এবং নতুন সদস্য নির্বাচিত হবেন।
- কোম্পানির কমপক্ষে ১০০০ পাউন্ড মূল্যের শেয়ার হোল্ডাররাই ভোটাধিকার পাবেন ইত্যাদি।
ভারত শাসন: এতে স্থির হয়-
- ভারতে কোম্পানির কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ৪ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি করে কাউন্সিল গঠিত হবে। এর মধ্যে কলকাতা হবে সর্বোচ্চ কাউন্সিল।
- বাংলার গভর্নর, গভর্নর জেনারেল উপাধিতে ভূষিত হবেন। চারজন সদস্যের সমবায়ে গঠিত একটি সুপ্রিম কাউন্সিল শাসনকাজে সাহায্য করবে।
- একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন সহকারী বিচারপতির সমবায়ে কলকাতায় একটি সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়।
রেগুলেটিং আইনের মূল্যায়ন
রেগুলেটিং আইনের ত্রুটি
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত রেগুলেটিং আইনের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল, যেমন-
- কলকাতার কাউন্সিলকে সুপ্রিম কাউন্সিল করা হলেও বোম্বাই ও মাদ্রাজ কাউন্সিলের উপর কলকাতা কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণের সীমা নির্দিষ্ট ছিল না।
- গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের তিনজন সদস্য কোনো ব্যাপারে বিরুদ্ধ মত পোষণ করলে গভর্নর জেনারেলের পক্ষে প্রশাসন পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।
- গর্ভনর জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট-এর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও জটিলতার সৃষ্টি হয়।
- কোম্পানির ইংল্যান্ডে অবস্থিত ডাইরেক্টর সভার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পর্কের সীমারেখা সুনির্দিষ্ট ছিল না।
রেগুলেটিং আইনের গুরুত্ব
সর্বতোভাবে এই আইনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না-
- সর্বপ্রথম এই আইনের মাধ্যমে ভারতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
- এটি হল ভারতের প্রথম লিখিত আইন, যা পূর্বেকার অলিখিত ও স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেয়।
- এই আইনের দ্বারা ভারতে প্রথম নিয়মতান্ত্রিক শাসনের সূত্রপাত ঘটে।
- ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম এই আইনের দ্বারাই কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্যোগ নেয়।
পরিশেষে বলা যায়, রেগুলেটিং আইনের মাধ্যমেই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বীজ বপন করা শুরু হয়।
আরও পড়ুন – স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো