বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল |
বক্সারের যুদ্ধের কারণসমূহ
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পূর্ববর্তী নবাব মির জাফরকে সরিয়ে মির কাশিমকে বাংলার সিংহাসনে বসায়। কিন্তু অচিরেই উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাঁধে যা পরিণতি পায় বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে। মির কাশিমের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
রাজনৈতিক কারণ
(i) মির কাশিমের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের প্রধান কারণ ছিল নবাবের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা। তাঁর লক্ষ্য ছিল পরিপূর্ণ স্বাধীনতা।
(ii) মির কাশিম স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য মুরশিদাবাদ থেকে বিহারের মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
(iii) ইংরেজদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজকর্মচারীদের তিনি পদচ্যুত করেন। ফলে ইংরেজপক্ষ ক্ষুব্ধ হয় তাঁর উপর।
সামরিক উদ্যোগ
(i) মির কাশিম তাঁর সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কার, জেন্টিল, সমরু নামে তিনজন ইউরোপীয় সেনাপতিকে নিয়োগ করেন।
(ii) তিনি মুঙ্গেরে নির্মাণ করেন কামান ও বন্দুক তৈরির অস্ত্র কারখানা।
অর্থনৈতিক কারণ
(i) জমিদারদের উপর কর আরোপ,
(ii) ভূমিরাজস্বের হার ১% আনা বৃদ্ধি,
(iii) দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ,
(iv) দরবারের ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যেগুলি ইংরেজদের রুষ্ট করে তোলে।
প্রত্যক্ষ কারণ
ইংরেজ কোম্পানি ও তার কর্মচারীদের দস্তকের অপব্যবহার কোনোমতেই বন্ধ করতে না পেরে মির কাশিম দেশীয় বণিকদের উপর থেকে বাণিজ্যিক শুল্ক তুলে নেন। নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ঘা লাগার ফলে ইংরেজদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, যা শেষমেশ যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল বা গুরুত্ব
১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর বক্সারের প্রান্তরে সংঘটিত এই যুদ্ধের ফলাফল বা গুরুত্ব নিম্নে আলোচিত হল-
ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ
ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ ছিল চূড়ান্ত ফল নির্ণয়কারী যুদ্ধ।
কোম্পানির ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা
ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম ধাপ তৈরি হয়েছিল পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে।
বাংলায় ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলায় ব্রিটিশদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়।
উত্তর ভারতে ইংরেজদের আধিপত্যের সূচনা
বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের ফলে অযোধ্যার নবাব কোম্পানির অনুগত মিত্রে এবং দিল্লির সম্রাট ইংরেজদের বৃত্তিভোগীতে পরিণত হন। ফলে উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা ঘটে।
আর্থিক লুন্ঠনের সূচনা
এই যুদ্ধের পর বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে। কোম্পানি বাংলার নতুন নবাব নজম উদ-দৌলার কাছ থেকে উপঢৌকনের নামে ১৫ লক্ষ টাকা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলার কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও বাংলায় চালায় আর্থিক লুন্ঠন।
দেওয়ানি লাভ
FAQs on – বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন কে?