ধর্মীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের অবদান কী ছিল
ধর্মীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের অবদান কী ছিল? |
উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রতিভূ ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। রানি রাসমনির নির্দেশে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দিরে পুরোহিত নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। রামকৃষ্ণ ছিলেন সামাজিক গোঁড়ামি ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে। তাঁর সহজসরল ও উদার ধর্মীয় আদর্শ সমাজে নতুন আলোর দিশা দেখিয়েছিল।
শ্রীরামকৃষ্ণের মতাদর্শ
বিভিন্ন মত ও পথের সংঘাতে হিন্দুধর্ম ও সমাজ যখন দিশাহারা, তখন শ্রীরামকৃষ্ণের যত মত তত পথ-এই বাণী ও আদর্শ হিন্দুধর্মে প্রাণসঞ্চার করে। তিনি ছিলেন সর্বধর্মসমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। ঈশ্বরলাভের জন্য পাণ্ডিত্য, শাস্ত্রজ্ঞান, যাগযজ্ঞ, আচার-অনুষ্ঠান, সংসার ত্যাগ ও কৃচ্ছসাধনের পরিবর্তে অন্তরের একনিষ্ঠ ইচ্ছাশক্তিকেই ঈশ্বরপ্রাপ্তির মূল পথ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি।
শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মীয় সংস্কার
একজন প্রকৃত লোকশিক্ষক হিসেবে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, মূর্তিপূজা নিন্দনীয় নয়; আবার নিরাকার উপাসনাও শাস্ত্রসম্মত। ঊনবিংশ শতকে ভারতীয় সমাজে মানুষের আভিজাত্য এবং চরম ভোগবাদের প্রতিবাদ করেন তিনি। তিনি কখনও ধর্মপালনের জন্য সংসার ত্যাগের কথা বলেননি। পরিবারের সকলের মধ্যে থেকেই নিজ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাধনা করতে বলেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মতে, অন্তরে যদি ভক্তি থাকে তবে ঈশ্বরলাভের জন্য মন্দির-মসজিদে যাওয়ার দরকার নেই। ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন সব ধর্মের সাধন পদ্ধতি রামকৃয়দেব অনুশীলন করেছিলেন। এর ফলে তাঁর ধারণা হয়েছিল যে, ঈশ্বর এক এবং অভিন্ন। এভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন বিভিন্ন ধর্মের উপাসনাগত পদ্ধতির পার্থক্য হলেও তাদের মূল লক্ষ্য এক-ঈশ্বরকে পাওয়া। এইভাবে তিনি সমস্ত ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন।