প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে শিল্পায়নের কারণগুলি আলোচনা করো
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে শিল্পায়নের কারণগুলি আলোচনা করো। |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে শিল্পায়নের কারণসমূহ
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইংল্যান্ডের কলকারখানাগুলি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনে ব্যস্ত ছিল। জার্মান ডুবোজাহাজের আক্রমণের ভয়ে সমুদ্রপথে ইংল্যান্ড-ভারত জাহাজ চলাচল নিরাপদ ছিল না। এই সুযোগে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় পথে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জোগান দিয়ে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজার দখল করে নেয়।
সরকারি নীতি
ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের আমদানি বন্ধ হলে জাপান ও আমেরিকার হাত থেকে ভারতীয় শিল্প রক্ষার জন্য সংরক্ষণ নীতি চালু হয়, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড প্রতিবেদনে ভারতে শিল্পায়ন ঘটানোর কথা বলা হয়।
শিল্প কমিশন
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় শিল্পের প্রসার ও ব্যাবসাবাণিজ্যে ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিচার করার জন্য স্যার টমাস হল্যান্ডের নেতৃত্বে একটি সুপারিশ রচিত হয়। এই শিল্প কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ের কথা বলা হয়, যথা- যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সর্বভারতীয় ও প্রাদেশিক শিল্প বিভাগ স্থাপন, কারিগরি শিক্ষার বিস্তার এবং বৈজ্ঞানিক ও কারিগরির চাকুরির সুষ্ঠু সমন্বয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের কলকারখানাগুলি যুদ্ধসংক্রান্ত সরবরাহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়। শিল্পকে সচল রাখতে ও ভারতে শিল্পের পরিবেশ তৈরি করতে ব্রিটিশ সরকার সচেষ্ট হয়ে ওঠে।
ভারতীয় উদ্যোগ
ঐতিহাসিক সব্যসাচী ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন, এই সময় ভারতীয় উদ্যোগী ও পুঁজিপতিরা শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। অনুকূল পরিস্থিতিতে বস্ত্র, কাগজ, সিমেন্ট, চিনি, পাট, কয়লাখনি ইত্যাদি শিল্পে দেশীয় উদ্যোগে শিল্পায়ন ঘটে। টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি, সিন্ধিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। পশ্চিম ভারতের গুজরাটি শিল্পপতিদের মধ্যে ওয়ালচাঁদ হীরাচাঁদ, পুরুষোত্তম দাস, ঠাকুরদাস ও আম্বালাল সারাভাই প্রমুখ ভারতের শিল্পোন্নয়নের অগ্রগতিতে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন – স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা আলোচনা করো