রাওলাট আইনের শর্তসমূহ আলোচনা করো। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল

রাওলাট আইনের শর্তসমূহ আলোচনা করো। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল
রাওলাট আইনের শর্তসমূহ আলোচনা করো। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

রাওলাট আইন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ভারতের অশান্ত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য ইংরেজ সরকার স্যার সিডনি রাওলাটের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এটি রাওলাট কমিটি নামে পরিচিত। এই কমিটি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে একটি রিপোর্ট পেশ করে, এর ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ যে আইন পাস হয়, তা রাওলাট আইন নামে পরিচিত।

রাওলাট আইনের শর্তাবলি

রাওলাট আইনের শর্তগুলি হল-

প্রথমত: সরকারবিরোধী সব ধরনের প্রচারকার্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

দ্বিতীয়ত: সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে এবং বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল তাদের কারারুদ্ধ করে রাখা বা নির্বাসন দেওয়া যাবে।

তৃতীয়ত: সরকার যে-কোনো ব্যক্তির বাড়ি বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি করতে পারবে।

চতুর্থত: আদালতে বিচারকগণ কোনো জুরির সহায়তা এবং কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই বিচার করতে পারবেন।

পঞ্চমত: রাওলাট আইনের দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চতর আদালতে আপিল মামলা দায়ের করা যাবে না।

ষষ্ঠত:
কোনো সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।

সপ্তমত :
রাওলাট আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজনীতি, শিক্ষা বা ধর্মসংক্রান্ত কোনো কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

অষ্টমত :
রাওলাট আইনে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির মুক্তির জন্য অর্থ জমা দিতে হবে।

ভারতীয়দের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াগুলি হল- 

জাতীয় নেতৃত্ব: কেন্দ্রীয় আইনসভায় রাওলাট আইন পাসের সময় মহম্মদ আলি জিন্নাহ, মদনমোহন মালব্য প্রমুখ প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন। গান্ধিজি এই আইনের বিরুদ্ধে বলেন ‘উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি।’

সংবাদপত্রের ভূমিকা: জাতীয় নেতৃত্ব ছাড়াও অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দু, দ্য নিউ ইন্ডিয়া, বোম্বাই ক্রনিক্যাল, কেশরী প্রভৃতি সংবাদপত্রে এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। অমৃতবাজার পত্রিকা এই আইনকে মারাত্মক ভুল এবং নিউ ইন্ডিয়া পত্রিকা এই আইনকে দানবীয় বলে অভিহিত করে। 


গান্ধিজির ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধি রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। সত্যাগ্রহ সভা গঠনের মাধ্যমে তিনি অহিংস পদ্ধতিতে গণ আইন অমান্য করার পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য ৬ এপ্রিল সর্বভারতীয় ধর্মঘট আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেন। বোম্বাই, দিল্লি, অমৃতসর, লাহোর বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘট পালিত হয়।

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড:
রাওলাট আইনের প্রতিবাদে এবং পাঞ্জাবের এই দুই জনপ্রিয় নেতা- ড. সত্যপাল ও ড. কিচলুর মুক্তির দাবিতে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় (১৩ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রি.)। এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরস্ত্র জনতার উপর পুলিশ গুলি চালায়। এই নৃশংসতার প্রতিবাদে সারাদেশে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে এবং বোঝা যায় ভারতীয়রা আর বিদেশি শাসনের কাছে নতি স্বীকার করতে রাজি নয়।

Leave a Comment