১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি আলোচনা করো। |
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে এবং মহারানির শাসন শুরু হয়। এই সময়েও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বেশ কয়েকটি আইন পাস করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট
(ক) ইংল্যান্ডের রাজনীতি
ইংল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন আসন্ন হলে উদারনৈতিক ও রক্ষণশীল দল নিজেদের ভারতপ্রেমী হিসেবে উপস্থাপিত করতে আগ্রহী হয় এবং দশ বছরের মধ্যে কমিশন গঠন করা হয়, যা ইতিহাসে সাইমন কমিশন নামে পরিচিত। এই কমিশনে যেহেতু কোনো ভারতীয় সদস্য ছিল না তাই ভারতীয়রা এর নিন্দা করে এবং কমিশন ভারতে পা রাখলে হরতালের ডাক দেয়। এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিকে উত্তাল করে তোলে।
(খ) জাতীয়তাবাদের প্রভাব
১৯২০-এর দশকে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের প্রসার এবং বিপ্লবীদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ সরকারকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তাই ভারতবর্ষে নিজেদের অস্তিত্বকে সুনিশ্চিত করতে ব্রিটিশ সরকার একটি সংস্কার আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
(গ) গোলটেবিল বৈঠক
সাইমন কমিশনের অনুসন্ধান ও সুপারিশের ভিত্তিতে লন্ডনে তিনটি গোলটেবিল বৈঠক আহূত হয়। এরপর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে – ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন ছিল তারই ফলশ্রুতি।
ভারত শাসন আইনের শর্তাবলি
(ক) কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়ক শর্ত
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনাধীন প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্যগুলির সমবায়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়। কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের পাশাপাশি গভর্নর জেনারেলের অধীনস্থ একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই শাসনসংস্কার আইনের মাধ্যমে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের পুনা চুক্তি অনুসারে মুসলিম এবং তপশিলি সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
(খ) প্রাদেশিক সরকার বিষয়ক শর্ত
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইনে বড়ো প্রদেশগুলিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং ছোটো প্রদেশগুলিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে সংখ্যালঘু ও অনুন্নত জাতিগোষ্ঠীর সংরক্ষণ বজায় থাকে।