সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল
সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল? |
সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল
মিশরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্বরাজনীতিতে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তা ইতিহাসে সুয়েজ সংকট নামে পরিচিত।
সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণসমূহ
নাসের-এর পাশ্চাত্য বিরোধিতা
মিশরের ক্ষমতা দখলের পর থেকে নাসের-এর সঙ্গে পশ্চিমি শক্তিবর্গের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এসময় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করেন।
ইঙ্গ-মিশর চুক্তি বাতিল
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খালের নিরাপত্তার জন্য সৈন্য মোতায়েন করার অধিকার-সংবলিত একটি ইঙ্গ-মিশর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মেয়াদ ছিল ২০ বছর। কিন্তু ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নাসের এই চুক্তি বাতিল করেন এবং ইংল্যান্ডকে সুয়েজ অঞ্চল থেকে সৈন্য অপসারণে বাধ্য করেন। এর ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ভূমিকা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুয়েজ খালের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী ডালেস সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে একটি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিলেও ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাতে আগ্রহ দেখায়নি। পরে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের উপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানালে নাসের-এর পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প
বর্ষার সময়ে মিশরের নীলনদের জল জলাধারে সঞ্চয় করে কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ; জলবিদ্যুৎ উৎপাদন; শিল্প ও শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদির লক্ষ্যে আসওয়ান বাঁধ প্রকল্প গৃহীত হয়। এই প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ব্যয় ধার্য করা হয় প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পের অর্থের জন্য ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণদানে সম্মত হয়েছিল। আর অবশিষ্ট টাকা বিশ্বব্যাংক দিতে রাজি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ প্রদানে অসম্মতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন প্রভৃতির মতো বৃহৎ শক্তিগুলির প্রভাবে বিশ্বব্যাংকের ঋণের প্রস্তাব বাতিল নাসেরকে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট করে তোলে।
সুয়েজ খাল জাতীয়করণ
বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষুব্ধ নাসের সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন (২৬ জুলাই, ১৯৫৬ খ্রি.)। তিনি ঘোষণা করেন যে, এই খাল থেকে আদায়ীকত অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণের কাজে লাগানো হবে এবং আন্তর্জাতিক যোগসূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘোষণা জটিলতা সৃষ্টি করে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্ররোচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করলে (২৯ অক্টোবর, ১৯৫৬ খ্রি.) সুয়েজ সংকটের সৃষ্টি হয়।