জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য
জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য |
জোটনিরপেক্ষ নীতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে বিশ্বরাজনীতিতে দ্বিমেরুকরণ ঘটে। একদিকে ছিল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক জোট, আর অন্যদিকে ছিল রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক জোট। এই সময় এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এই দুই জোটের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখে। একেই জোটনিরপেক্ষ নীতি বলা হয়। নির্জোট বা জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (Non-Aligned Movement) স্থপতি ছিলেন জওহরলাল নেহরু। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জোটনিরপেক্ষ দেশ হল- ভারত, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ
(ক) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিদেশনীতি অনুসরণ ও পরিচালনা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটের উদ্ভব হলেও জওহরলাল নেহরু বলেন, এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি আমেরিকা বা রাশিয়া -এই দুটি জোটের কোনো একটি জোটের অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের কোনো লক্ষ্যই পূরণ হবে না। তাই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিদেশনীতির অনুসরণ ও পরিচালনাই ছিল জোটনিরপেক্ষতার মূল উদ্দেশ্য।
(খ) আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা প্রশমন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিবদমান দুই গোষ্ঠী- সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই বিশ্বশান্তির পক্ষে বিপদ ডেকে আনে। এসময় ভারত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা প্রশমন ও বিশ্বশান্তির পক্ষে এক বিকল্প নির্জোট গোষ্ঠী গঠনের নীতি গ্রহণ করে।
(গ) বর্ণীবষম্যবাদের বিরোধিতা এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বন্ধ করা
সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ উভয়ই বিশ্বশান্তির পক্ষে ভয়াবহ, তাই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অগ্রদূত নেহরু উপলব্ধি করেছিলেন যে-সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান না হলে বিশ্বশান্তি অলীক কল্পনাই থেকে যাবে। তাই বেলগ্রেড সম্মেলনে (১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ) বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধিতার নীতি গৃহীত হয়।
(ঘ) ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সকল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি, আঞ্চলিক অখণ্ডতা প্রতিষ্ঠা, বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার নীতি গ্রহণ এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে সমর্থন জানানো ইত্যাদি।