দাতাঁত কী? বিশ্বরাজনীতিতে দাতাঁতের উদ্ভবের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো
দাতাঁত কী? বিশ্বরাজনীতিতে দাতাঁতের উদ্ভবের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো। |
দাতাঁত
দাতাঁত হল একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ উত্তেজনার অবসান। ঠান্ডা যুদ্ধের পর দুই পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটের মধ্যে আন্তর্জাতিক, ক্ষেত্রে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রশমন করতে আমেরিকা ও রাশিয়া যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা-ই হল দাতাঁত। ফরাসি রাষ্ট্রনায়ক চার্লস দ্য গল ‘দাতাঁত’ শব্দটির প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন।
বিশ্বরাজনীতিতে দাতাঁতের উদ্ভবের কারণসমূহ
দাতাঁতের উদ্ভবের কারণগুলি হল-
আণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার ও তার বিধ্বংসী পরিণাম বিশ্বকে আতঙ্কিত করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তারা যুদ্ধের সম্ভাবনা এড়াতে আপসের পথে অগ্রসর হয়; যার মধ্য দিয়ে দাতাঁত সম্পর্কের সূচনা হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ানর সমস্যা
পূর্ব ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর চূড়ান্ত সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ ও মস্কোর আধিপত্য নীতি চিন, কোরিয়ার মতো অন্যান্য সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলি ভালো চোখে দেখেনি। তা ছাড়া চিন-সোভিয়েত সীমান্ত বিরোধজনিত সংকট এই দুটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দাতাঁতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল।
গর্বাচেভ নীতি
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের পর সোভিয়েত-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা তথা জটিলতা দূর করতে গর্বাচেভ নীতি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। গ্লাসনস্ত (Glasnost) ও পেরেস্ত্রৈকা (Perestroika) সমৃদ্ধ তাঁর নতুন রাজনৈতিক তত্ত্বের অন্তর্গত বিষয়গুলি ছিল সমঝোতার বার্তাবাহী।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলালর ভূমিকা
তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ ও তাদের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন দাতাঁতের পথ অনেকটাই সুগম করে। ঠান্ডা লড়াইয়ের সমালোচনা করে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্বশান্তি, বিশ্বপ্রগতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে থাকলে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিভঙ্গিতে আসে আমূল পরিবর্তন।
দাতাঁতের গুরুত্ব
দাতাঁতের গুরুত্বগুলি হল-
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পারস্পরিক উত্তেজনা হ্রাস করতে সমর্থ হয়।
- নিরস্ত্রীকরণের জন্য (ভ্লাদিভোস্টক ও হেলসিঙ্কি) সম্মেলন আয়োজন এবং চুক্তি (SALT-I, II, III, CTBT, NTBT, PTBT, ABM) স্বাক্ষরে সমর্থ হয়।
- মস্কো-ওয়াশিংটন হটলাইন তৈরি হয়।
- বিশ্বরাজনীতিতে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে দেয় এবং দুই মহাশক্তি-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয়সংকোচ করে উদ্বৃত্ত অর্থ উন্নয়নের কাজে ব্যয় করতে সাহায্য করে।