চিনা কমিউনিস্টদের লং মার্চ-এর উপর একটি টীকা লেখো

চিনা কমিউনিস্টদের লং মার্চ-এর উপর একটি টীকা লেখো

চিনা কমিউনিস্টদের লং মার্চ-এর উপর একটি টীকা লেখো
চিনা কমিউনিস্টদের লং মার্চ-এর উপর একটি টীকা লেখো

চিনা কমিউনিস্টদের ‘লং মার্চ’

চিনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল লং মার্চ বা দীর্ঘ পদযাত্রা। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর মাও জে দং-এর নেতৃত্বে প্রায় ১ লক্ষ কমিউনিস্ট কর্মী ও সেনা সরকারি বাহিনীর অবরোধ ভেঙে প্রায় দীর্ঘ ৬০০০ মাইল পথ অতিক্রম করে দক্ষিণ চিন থেকে উত্তর-পশ্চিম চিনের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান শেনসি প্রদেশে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর উপস্থিত হন। ইতিহাসে এই পদযাত্রাই দীর্ঘ পদযাত্রা বা লং মার্চ (Long March) নামে পরিচিত।

তারা ৩৭০ দিন ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে এবং প্রবল দুঃখদুর্দশা সহ্য করে শেনসি প্রদেশে পৌঁছোন। পথকষ্ট সহ্য করতে না পেরে ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৯২ হাজার জনের মৃত্যু হয়। মার্কিন সাংবাদিক এডগার স্নো (Edgar Snow) তাঁর Red Star Over China নামক গ্রন্থে এই অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন।

গুরুত্ব

লং মার্চ-এর গুরুত্বগুলি হল-

(ক) কমিউনিস্টদের সাফল্য

দীর্ঘ যাত্রাপথে মাও-এর নেতৃত্বে লালফৌজ ৬২টি নগরে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। শেনসি ও কানসু প্রদেশ দুটির উপর মাও তাঁর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিলেন। শেনসি প্রদেশে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠিত হয় এবং তার রাজধানী হয় সিয়াং ফু।

(খ) মাও-এর মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি

লং মার্চ-এর সাফল্যের ফলে মাও জে দং কমিউনিস্টদের কাছে সুযোগ্য নেতায় পরিণত হন এবং তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

(গ) অভিজ্ঞতা সঞ্চয়

এই পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার ফলে কমিউনিস্ট কর্মী ও সেনারা তাদের দেশ, জনগণ ইত্যাদি বিষয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে। পরবর্তীকালে প্রজাতান্ত্রিক শাসনকাঠামো গঠনের সময়ে এই অভিজ্ঞতা তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে।

(ঘ) কষ্টসহিষ্ণু মানোভাব

কমিউনিস্ট কর্মীরা দীর্ঘ পদযাত্রায় যে নানাবিধ কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল, তার ফলে তাদের কষ্টসহিষুতা বৃদ্ধি পায়, যা পরবর্তীকালে কমিউনিস্টদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটায়।

(চ) সহানুভূতিলাভ

লং মার্চ-এর ফলে কমিউনিস্টরা চিনের সাধারণ মানুষের সহানুভূতি লাভ করেছিল; যার ফলে চিনে মাও জে দং-এর নেতৃত্বে পরিচালিত কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অপরদিকে চিয়াং কাই-শেক-এর কুয়োমিনতাং দল জনসমর্থন হারাতে থাকে।

Leave a Comment