মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো – আজকের পর্বে মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হল।
মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো |
ইউরোপে রেনেসাঁস যুগে যে মানবকেন্দ্রিক আদর্শের জন্ম হয়, তা-ই ‘মানবতাবাদ’ (Humanism) নামে পরিচিত। এটি হল জীবনমুখী দর্শন। মানবতাবাদীরা মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা থেকে সাধারণ মানুষদের হৃদয় বা মনের পরিবর্তন করতে নিরলস সংগ্রাম করেছিলেন। নীচে মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
মানুষের সামগ্রিক কল্যাণসাধন
শুধুমাত্র ব্যক্তির নিজের বা গোষ্ঠীর বা জাতির মঙ্গলসাধনই নয়, সামগ্রিকভাবে মানবসমাজের মঙ্গলসাধনই হল মানবতাবাদের মূল নীতি। সবার উপরে মানুষের মর্যাদা ও মহিমা এবং রক্তমাংসের মানুষের অনুভূতির প্রতি ছিল মানবতাবাদীদের সুগভীর বিশ্বাস। তাঁদের চোখে মানুষই ছিল সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু।
ধর্মনিরপেক্ষতা
চিন্তা ও মননে মানবতাবাদীরা ছিলেন উদারনৈতিক, সহনশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। তাঁরা মধ্যযুগীয় ধর্মীয় অনুশাসন ও বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জনের শিক্ষা লাভ করেন। তাঁরা সব সময় ধর্মের বাইরে মানুষের অস্তিত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করতেন।
ধ্রুপদি সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্ব চর্চা
মানবতাবাদী অতীত যুগের (ধ্রুপদি গ্রিক ও রোমান) ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি অধ্যয়ন করে অর্জিত জ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে। রেনেসাঁস যুগে মানবতাবাদীদের একটি প্রধান কাজ ছিল প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ও প্রচার করা।
শিল্পকলায় অবদান
মধ্যযুগের শিল্পকলার বিষয়বস্তু ছিল ঈশ্বর এবং জিশু। মানবতাবাদী শিল্পীদের শিল্পকার্যের বিষয়বস্তু ছিল মানুষ ও প্রকৃতি। শিল্পকলার মাধ্যমে মানুষের দুঃখকষ্ট আনন্দ বেদনা ফুটিয়ে তুলে তাঁরা শিল্পকলার ইতিহাসে এক বিপ্লব সাধন করেন।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগীয় অরাজকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সামাজিক কুসংস্কারাচ্ছন্নতা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল মানবতাবাদীগণ। এই মহান পন্থাই ছিল মানবতাবাদী আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য।